জমি বা ভূমি দলিল ডিজিটাল সংরক্ষণ রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৬০ ধারা অনুসারে, দলিল রেজিস্ট্রেশন মানে দলিলে লিখিত বিষয়বস্তু হুবহু বালাম বহিতে হাতে-কলমে নকল করে মূল দলিলের সর্বশেষ পৃষ্টায়, দলিলটি কত সালের, কত নম্বর বালাম বহির, কত পৃষ্টা থেকে কত পৃষ্টায় নকল করা হলো তার সার্টিফিকেট লিখে কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষর করা। এই ভাবে দলিলের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ হলেই কেবলমাত্র মূল দলিলটি পক্ষগণকে ফেরত দেয়া যায়।
একই জমির একটি খতিয়ানের একাধিক কপি যেভাবে বিভিন্ন অফিসে ও স্থানে বিভিন্ন ভাবে সংরক্ষিত থাকে; কোন একটি কপি হারিয়ে গেলে, ছিড়ে গেলে বা অন্য কোন ভাবে নষ্ট হয়ে গেলে, অন্য অফিস বা স্থান থেকে সংগ্রহ করা যায়, দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে তা যায় না; কারণ দলিলের নকলকৃত বালামের একটি মাত্র কপি সংরক্ষণ করা হয়। কোন ভাবে বালাম বহি হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে কিংবা অন্য কোন ভাবে নষ্ট হয়ে গেলে দলিলটির কপি কোন ভাবেই সংগ্রহ করা যায় না।
ফলে মামলা মোকদ্দমা বা অন্য কোন প্রয়োজনে সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণ কঠিন হয়ে যায়। সুরক্ষিত ও আধুনিক রেকর্ড রুম ব্যবস্থাপনার অভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত বালাম বহির ক্ষতিসাধন করে চলছে। ফলে জমা জমি নিয়ে লক্ষ লক্ষ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বালাম বহি সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি হয়ে পড়েছে।
একটি মূল দলিল মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মূল দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতার ছবি, স্বাক্ষর ও বৃদ্ধাঙ্গুলের টীপ থাকে, যা মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি মূল দলিল ফেরৎ পেতে অফিস ভেদে একমাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এ দীর্ঘ সময়ে রেজিস্ট্রি বিহিন অবস্থায় লক্ষ লক্ষ দলিল সংরক্ষন করা খুবই কঠিন কাজ।
অধিকাংশ অফিসে উন্নত রেকর্ডরুম না থাকায় দলিলের পৃষ্ঠা ছিড়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, দাগ-খতিয়ানের পরিবর্তণ, ক্রেতার নামের পরিবর্তণ ইত্যাদি সমস্যার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এছাড়া দীর্ঘ সময় পর রেজিস্ট্রিকরণ প্রকৃয়া শেষ হলে তার তথ্য অফিসের নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নোটিশ বোর্ডে দেয়া তথ্য সঠিক সময়ে জনগণের কাছে পৌছায় না। ফলে লক্ষ লক্ষ মূল দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে পড়ে থাকে। এভাবে পড়ে থাকা দলিলের সংখ্যা বেশি হলে নির্দিষ্ট সময় পর রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৮৫ ধারার বিধান অনুসারে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। শেষ পর্যন্ত জনগণ তার কাঙ্ক্ষিত মূল দলিল গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়।
আমার পর্যবেক্ষণঃ প্রযুক্তি সহজলভ্য হলেও অজানা কারনে দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ এখনো সম্ভব হয়নি। আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গিকারাবদ্ধ। ২০১৪ সালের মে মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়ের এটুআই বিভাগের সাথে পরিচিত হই। “রেজিস্ট্রিকৃত মূল দলিল দ্রুত ফেরত প্রদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার” শীর্ষক একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহন ও পাইলটিং কাজের সাথে জড়িত হওয়ার কারনে এটুআই এর উদ্যোগে দেশে ও বিদেশে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করি এবং “ডিজিটাল বালাম” ধারনার অবতারণ করি।
ডিজিটাল বালামঃ ‘ডিজিটাল বালাম’ মূলত একটি পদ্ধতি: যার মাধ্যমে বালাম বহিতে দলিলের রেজিস্ট্রেশনের পরিবর্তে দলিলের ইমেজ সার্ভারে রেখে রেজিস্ট্রি করা যায়। এ পদ্ধতিতে প্রথমে স্কেনার মেশিনের মাধ্যমে মূল দলিলের ইমেজ তৈরি করা হয়। পরে একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে নির্দিষ্ট ফরমেটে সেই ইমেজ সংরক্ষণ করা হয়। সফটওয়্যার এর সার্চ অপশনে ইনপুট হিসেবে দলিল দাতার নাম, গ্রহিতার নাম, দলিল নম্বর ও তারিখ, মৌজার নাম ইত্যাদির মাধ্যমে দলিলটি খুজে পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে দলিলের প্রিন্ট কপিও সংরক্ষণ করা যাবে।
(ক) তাৎক্ষণিক মূল দলিল ফেরৎ দেয়া যাবে। ফলে মূল দলিল পাওয়ার জন্য বার বার অফিসে যাতায়াত কিংবা দুই-তিন বছর পর্যন্ত সময় অপেক্ষা করতে হবে না।
(খ) দলিলের ইমেজ ডিজিটাল বালামে অর্থাৎ সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে বালাম বহি হারিয়ে যাওয়া, পুড়িয়ে যাওয়া বা বালামের পাতা ছিড়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটবে না। আদালতে মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা কমে যাবে।
(গ) তুলনামূলক কম খরচে মাত্র কয়েক মিনিটে দলিলের নকল সরবরাহ করা যাবে।
(ঘ) দলিলের নকলের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
(ঙ) অনলাইনে Indexing বা সূচিকরণ করা হবে। ফলে যে কোন দলিল দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাবে।
(চ) সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে এল,টি, নোটিশ প্রেরণের প্রয়োজন হবে না। ভূমি অফিসের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে, যা ব্যবহার করে দলিল দেখা যাবে।
(ছ) আদালত কর্তৃক বালাম বহি তলবের প্রয়োজন হবে না। আদালতের জন্যও নির্ধারিত বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে, যা ব্যবহার করে দলিল দেখা যাবে।
(জ) কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অফিসের সীল জাল করে জাল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে জমির নামজারী (Mutation) বন্ধ হবে।
(ঝ) পূর্বের মতো দলিলের পৃষ্ঠা পরিবর্তন করে ক্রেতার নামের পরিবর্তন, বালামে ঘষা-মাঝা করে দাগ, খতিয়ান ও চৌহদ্দির পরিবর্তন সম্ভব হবে না। ফলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে।
According to section 80 of the Land or Land Deeds Digital Preservation Registration Act, 1908, deed registration means handwriting the contents of the document exactly in the Balam book on the last page of the original document, how old is the document, how many pages are copied from how many pages. Is to write his certificate and sign it by the officer. In this way, the original document can be returned to the parties only after the registration process of the document is completed.