ভূমি সেবায় ভোগান্তি কমাবে ই-মিউটেশন

f62407f673676274e4a7244ff207e59c 5d86f658e18d0
Spread the love

ভূমি সেবা: ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভুক্তভোগীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। এক জমি একাধিক ব্যক্তির নামে বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাজনা পরিশোধ, দলিল উত্তোলনসহ ভূমি অফিসের যেকোনও কাজ ঘুষ ছাড়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ প্রক্রিয়ারই অংশ হচ্ছে ই-মিউটেশন বা ই-নামজারি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র সরকারের এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান বাদে বাকি ৬১ জেলায় ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্কেল অফিস এবং তিন হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারির কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে সারাদেশে এক কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৩৯ জন সুবিধাভোগী ই-নামজারির কার্যক্রম থেকে সুবিধা পেয়েছে। এ সংক্রান্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে।

জানা গেছে, ই-নামজারি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ফৌজদারি মামলা, ভোগান্তি ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমছে। এর ফলে নথি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলেও সমস্যা হবে না। এতে নাগরিকের সময়, খরচ ও যাতায়াত যেমন কমবে তেমনি খতিয়ানের স্থায়িত্ব বাড়বে। ডিজিটাল সেন্টারগুলোর আয় বাড়ছে। সরকারি ও ভিপি জমি (ভেস্টেট প্রোপার্টি) বা সম্পত্তি সুরক্ষা পাবে। বড় কথা হচ্ছে ই-নামজারির ফলে এক জমি একাধিকবার একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি, নামজারি ও রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হবে।

সূত্র জানায়, আরএস খতিয়ান সিস্টেম (আরএস-কে) ডিজিটাইজড করার অংশ হিসেবে এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত আরএস খতিয়ান অনলাইনে প্রদর্শন ও বিতরণের লক্ষ্যে আরএস খতিয়ান সিস্টেম তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট ৫৩টি জেলার ৩২১টি উপজেলায় এক কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৭০১টি খতিয়ান এন্ট্রির কাজ শেষ এবং তা আরএস-কে সিস্টেমে প্রকাশিত হয়েছে। বাকি জেলার জন্য প্রস্তুত করা প্রায় দুই কোটি আরএস রেকর্ডের উপাত্ত আরএস-কে সিস্টেমে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও অনলাইনে প্রদর্শনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।  

জমি দখল-জালিয়াতি প্রতিকারে আইন হচ্ছে

সরকার এরই মধ্যে ডিজিটাল রেকর্ডরুম চালু করেছে। এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের সব ভূমি রেকর্ডকে (খতিয়ান) ডিজিটাল করার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড রুম সার্ভিস (ডিএলআরএস) নামে একটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে জেলা রেকর্ড রুমে সিএস, এসএসহ অন্যান্য খতিয়ান ডিজিটাইজড করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। 

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আওতায় পর্যায়ক্রমে ভূমি ব্যবস্থাপনার অন্য বিষয়গুলো ডিজিটাইজড করা হবে। ইতোমধ্যে ভূমি বিষয়ক ৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় মোট মামলা হয়েছে ১০ লাখ।’

তিনি জানান, সরকারের অল্প সময়ে এক কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৩ জন সুবিধাভোগী ই-নামজারি থেকে সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৫টি নামজারি আবেদন দাখিল হয়েছে অনলাইনে। মন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা জুলাই থেকে সারা দেশে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। তবে তিনটি পার্বত্য জেলা এই কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিস এবং তিন হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

প্রচলিত পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করে ভূমি মন্ত্রণালয়। যেমন প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪২ লাখ জমি রেজিস্ট্রেশন হয় এবং উত্তরাধিকারমূলে আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ নামজারির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু মালিকানা হালনাগাদ হয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ। প্রায় ৩০ লাখ জমির হস্তান্তর নামজারি ও রেকর্ড হালনাগাদের বাইরে থেকে যায়। ফলে নাগরিকের সময়, খরচ ও যাতায়াত বেশি হয়। এছাড়া নামজারি হওয়ার পর রেকর্ড হালনাগাদ না করায় একই জমি একাধিক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এর ফলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সৃষ্টি হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাইজড হলে এসব সমস্যা দূর হবে বলে জানান ভূমিমন্ত্রী।


Spread the love

Join The Discussion

Compare listings

Compare