অনিবার্য প্রয়োজনে সরকার কোনো জমি অধিগ্রহণ করলে ওই এলাকার জমির ১২ মাসের গড় মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ ভাগ ক্ষতিপূরণ পাবেন জমির মালিক। আর জমি অধিগ্রহণ করে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলে ক্ষতিপূরণের অর্থ হবে আরো বেশি—জমির গড় মূল্যের ৩০০ ভাগ। অর্থাৎ সরকার নিজের প্রয়োজনে ১০০টাকা মূল্যের জমি অধিগ্রহণ জমির মালিক ৩০০ টাকা (তিন গুণ) এবং বেসরকারি প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করলে ৪০০ টাকা (চার গুণ) পাবেন। আগে ক্ষতিপূরণের হার ছিল মাত্র দেড় গুণ। নতুন এ আইনের আওতায় সরকার কোনো জমি ও স্থাপনা অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করলে অন্য কোনো আইনে মামলা করা যাবে না, কোনো আদালত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারবেন না। আর অধিগ্রহণ হবে এমন জমির ওপর বাড়তি অর্থ পাওয়ার লোভে ঘরবাড়ি বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে তা নিজ খরচে অপসারণ করতে হবে জমির মালিককে।
ভূমি অধিগ্রহণ সহজ করতে গত বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া আইনের খসড়াটি ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭’ নামে সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। তাতে এসব বিধান রাখা হয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে যাঁর জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তিনি এখনকার তুলনায় আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এতে জমি অধিগ্রহণ অনেক সহজ হবে বলে আশা করছে সরকার।এত দিন ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ করত সরকার। এতে জমির মূল্যের অতিরিক্ত দেড় গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান ছিল। জেলা প্রশাসক এ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতেন। এতে অনেক জমি ও স্থাপনার মালিক জমি দিতে নিরুৎসাহ হয়ে আদালতে মামলা করতেন। ফলে অধিগ্রহণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হতো। নতুন আইন জারি করে এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছে সরকার। তা ছাড়া উচ্চ আদালতের রায়ে সামরিক সরকারের সময় জারি করা অধ্যাদেশগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কারণেই নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে সংসদে উত্থাপিত বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ এ আইন অমান্য করলে বা প্ররোচনা দিলে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সম্প্রতি পিপিপি বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বিনিয়োগের বড় সমস্যা জমি পাওয়া। বিদ্যমান ব্যবস্থায় জমি অধিগ্রহণ করা কঠিন কাজ। জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ কম দেওয়া হয়। এ জন্য অনেক মামলা হয়। ফলে ক্ষতিপূরণ বাড়িয়ে আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। শিগগিরই আইনটি পাস হবে।বিলের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো মালিক তাঁর বাড়ি, কারখানা বা ভবনের সম্পূর্ণ অংশ অধিগ্রহণ করতে হবে—এমন শর্ত দিলে সংশ্লিষ্ট বাড়ি, কারখানা বা ভবনের অংশবিশেষ অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে অধিগ্রহণের সময় কোনো স্থাবর সম্পত্তি কোনো বাড়ি, কারখানা বা ভবনের অংশ কি না, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।সংসদে উত্থাপিত এ বিল অনুযায়ী, ক্ষতিপূরণ হিসাবের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হবে যে জমি অধিগ্রহণ করা হবে তার আশপাশের একই শ্রেণির ও সমান সুবিধাযুক্ত স্থাবর সম্পত্তির নোটিশ জারির আগের ১২ মাসের মূল্যের গড় করে। এর সঙ্গে সম্পত্তিতে ফসল বা বৃক্ষ থাকলে ব্যক্তির ক্ষতি, সম্পত্তি বিভাজনের ক্ষতি, অধিগ্রহণের কারণে ব্যক্তির অন্যান্য স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা উপার্জনের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের ক্ষতি এবং অধিগ্রহণের কারণে ব্যক্তির আবাসস্থল ও ব্যবসাকেন্দ্র স্থানান্তর করতে বাধ্য হলে স্থানান্তরের জন্য যুক্তিসংগত খরচ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মালিক বাজারমূল্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ ভাগ ক্ষতিপূরণ পাবেন। অধিগ্রহণের কারণে কেউ বাস্তুচ্যুত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াও পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার। বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিগ্রহণ করা হলে এসব খরচ ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবেবর্গাদারের আবাদ করা ফসলসহ কোনো স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হলে ফসলের জন্য জেলা প্রশাসক যেমন ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবেন, একই রকম ক্ষতিপূরণ বর্গাদারকে দিতে হবে।
ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরির প্রাক্কলিত অর্থ জমা দেওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দেবেন। কোনো ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের অর্থ নিতে অসম্মত হলে বা ক্ষতিপূরণ নেওয়ার দাবিদার পাওয়া না গেলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা নিয়ে কোনো আপত্তি দেখা দিলে ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি কোষাগারে রাখা হবে। অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ পরিশোধ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে গেজেট জারির মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হবে।হুকুমদখল বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, কেবল পরিবহন বা যোগাযোগব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মালিক বা তাঁর পরিবারের আবাসস্থল, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, হাসপাতাল, গণগ্রন্থাগার, কবরস্থান বা শ্মশানের স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল করা যাবে না। সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য সরকার কোনো স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল রাখতে পারবে।