বায়া দলিল শব্দটি ফার্সী। আমাদের জীবনে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। জমি জমার ব্যাপারে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। জমি কিনতে গেলেও লাগবে, বেচতে গেলেও লাগবে। বাংলায় এর কোন বিকল্প শব্দ এখনও তৈরি হয়নি। হয়ত আর তৈরি হবেনা। তবে বলা যেতে পারে জমির ইতিহাস। ইংরেজীতে বলা হয়ে থাকে চেইন অব টাইটেলস। জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা। মানুষের ইতিহাসকেও আমরা মানুষের বায়া দলিল বলতে পারি। যেমন ধরুন, আমি আমার বাবা দাদা পীরদাদা। এতো গেল পেছনের দিকে। ভবিষ্যতের দিকে আমার সন্তান নাতি পুতি ইত্যাদি। সোজা ভাষায় বলতে পারেন বংশ লতিকা। ইংরেজীতে ফ্যামিলি ট্রি।আরবী ফার্সী বা উর্দুতে শাজারা বলা হয়। রাজা মহারাজা বাদশা নবাবদের এ রকম বংশ লতিকা থাকে। কারন তারা ইতিহাসের অংশ। অতি সাধারন মানুষ থেকে এলিট অভিজাত রাজা বাদশাহ হওয়ার ইতিহাসও আছে। সমাজের নামী দামী মানুষের জন্যে ইংরেজী ভাষায় নোবেল বা এ্যারিস্টোক্রেট শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলায় বলতে পারি অভিজাত। প্রাচীন গ্রীসে অভিজাতদের সরকার ছিল। আরবী ফার্সী ও উর্দুতে আশরাফ বা আতরাফ শব্দ ব্যবহার করা হয়।বায়া দলিল হল জমিটি যার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে সেই মালিকের দলিল। বায়া দলিল ছাড়াও সংশ্লিষ্ট জমির পূর্বতন সকল কেনাবেচার দলিল থাকা প্রয়োজন।
আমার এক মুরুব্বী বলেছিলেন, অভিজাত হতে হলে অর্থ সম্পদ ও শক্তি থাকতে হবে। এসব বিষয় সমাজে একজনের প্রভাব তৈরি করে। প্রাচীন জমানায় এমনি করেই সমাজে অভিজাত তৈরি হতো। মসজিদের ইমাম সাহেব, স্কুল কলেজের প্রিন্সিপাল বা হেড মাস্টার কখনই অভিজাত হতে পারেন না। কারন তাদের হাতে শক্তি বা অর্থ কিছুই নাই। খবরের কাগজের সম্পাদকও অভিজাত নন। কিন্তু কাগজের মালিক একজন অভিজাত ব্যক্তি। কারন তাঁর কাছে প্রচুর অর্থ সম্পদ ও শক্তি আছে। যেমন ধরুন মসজিদের ইমামের পেছনে নামাজ পড়েন রাস্ট্রপতি,প্রধান মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও প্রধান সেনাপতি। তাই বলে ইমাম সাহেব ক্ষমতাবান ব্যক্তি নন। সক্রেটিস ও অভিজাত ছিলেন না। তিনি অতিশয় গরীব একজন দার্শনিক ছিলেন। সমাজের যুকেরা তাঁর কথা শুনতো। তাই রাস্ট্র বা সমাজের অভিজাতরা তাঁকে হত্যা করেছে। ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। খলিফার সাথে তাঁর বনিবনা হয়নি বলে তাঁকে হত্যা করা হয়। মনসুর হাল্লাজ একজন সুফী কবি ছিলেন। তাঁর ভাবধারা ও বক্তব্যকে শাসক গোস্ঠি সুনজরে দেখেনি। তাই তাঁকেও হত্যা করা হয়। আমাদের দেশে ধনী ও রাজনীতিকরা ভিতরে একই গোস্ঠি। সরকারের বিশাল শক্তিকে ধনীরা ব্যবহার করে থাকে। এক সময় নাকি সাত খুন করার আইন গত অধিকার ছিল সমাজের ক্ষমতাবান মানুষদের।
লেখাটি শুরু করেছি আমাদের জাতির বায়া দলিল নিয়ে কিছু কথা বলার জন্যে। প্রত্যেক জাতিরই বায়া দলিল আছে। যেমন ধরুন, ইউরোপে বহু জাতি আছে যারা এক সময় জলদস্যু ডাকাত লুটেরা বা হারমাদ ছিল। ধন ও শক্তি জোগাড় করে তারা নিজ মানুষদের করতল গত করে। কালক্রমে তারাই রাজা বা রাজ পরিবারে পরিণত হয়। তারা এখন নিজেদের ব্লু ব্লাড বলে দাবী করে। ইংল্যান্ডের রাজ পরিবার এক সময় জলদস্যু ছিল। সে হয়ত ৮শ’ হাজার বছর আগে। পুরাণো ভারতবর্ষে বহু নবাব রাজা মহারাজা ছিলেন যারা রাজশক্তির সহযোগী। এরা সৈনিক থেকে বাদশ হয়েছে। আবার অনেকেই বণিক থেকে রাজ দরবারে স্থান পেয়েছে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরাণে বলা হয়েছে, আল্লাহর আইনে আশরাফ আতরাফ বলে কিছু নেই। আরব আজমী বলে কিছু নেই। বংশ কারো পরিচয় নেই। সবার পরিচয় আদমের বংশ। সবার পরিচয় হবে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে। সমাজ বা রাস্ট্র পরিচালনায় আরবদের কোন বিশেষ প্রাধান্য নাই। যোগ্য ব্যক্তি অনারব আজমী বা বিদেশী হলেও নেতা হতে পারবে। এখন যোগ্য অযোগ্যের মাফকাঠি বা চিন্তার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ প্রসংগে হজরত আলীর (রা) একটা বাণী উল্লেখ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, একটা সমাজ দেশ বা রাস্ট্র নস্ট বা পঁচে গেছে কিভাবে বুঝবে। সেই পঁচা সমাজের চিহ্ন হলো, ১। গরীবেরা ধৈর্য হারা হয়ে যাবে, ২। ধনিরা কৃপন হবে,৩। মুর্খরা মঞ্চে বসে থাকবে,৪। জ্ঞানীরা পালিয়ে যাবে,৫। রাজা মিথ্যা কথা বলবে। পঁচে যাওয়া বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া বহু জাতি বা রাজ্যের কথা ইতিহাস ও আল কোরাণে উল্লেখ করা হয়েছে। ফোরাউনের( রামসিস টু ) লাশ এখনও মিশরের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। প্রায় চার হাজার বছর আগের একজন মহা অত্যাচারীর দেহ মমি করে রাখা হয়েছে জনগনের জন্যে। এই সেই ফেরাউন যে মুসা(আ) এবং তাঁর জাতির উপর অত্যা্চার করেছিল। আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাকে মানব জাতির জন্যে নিদর্শন করে রাখবো। লোহিত সাগরে ডুবে মারা যাওয়ার পরেও ফেরাউনের লাশ ভেসে উঠেছিল। সেই লাশই হাজার হাজার বছর ধরে জাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে। সেই মিশরের মানুষ লড়াই করছে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে।আমরা বাংলাদেশের সাধারন মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকেই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি। আর এসব লড়াইয়ে প্রথম কাতারের সৈনিক ছিল কৃষক শ্রমিক আর কামার কুমোর। খুব পেছনের দিকে নাইবা গেলাম। বৃটিশদের বিরুদ্ধে ১৯০ বছর সবচেয়ে বেশী লড়াই করেছে সাধারন মানুষ। ইংরেজরা হচ্ছে একটা ধুর্ত জাতি। ষড়যন্ত্র ওদের চরিত্রের প্রধান বৈশিস্ট। শক্তি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাবত পৃথিবীকে দখল করে রেখেছিল এক সময়। ওরাই আমাদের এই দেশে সাম্প্রদায়িকতা চালু করেছে। হিন্দু মুসলমানের বিভেদ তৈরি করেছে। সেই বিভেদের কারনেই ৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছে। এখন আমরা সেই ইংরেজদেরই ভক্ত এখন। এই ইংরেজরাই ১৯০ বছরে সোনার বাংলাকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছে। দাদাভাই নওরোজী লিখিত বই ‘পোভারটি ইন ইন্ডিয়াতে’ বলেছেন তখনকার হিসাবে কোম্পানী প্রতি বছর এদেশ থেকে ২১ লাখ স্টার্লিং পাউন্ড নিয়ে গেছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলা দখলের বছর কয়েক পরেই বাংলায় দুর্ভিক্ষ হয়। আমাদের লোকেরা এখনও বিলেত থেকে স্যার নাইট লর্ড উপাধি পেলে আনন্দের সীমা থাকেনা।২০১১ সালে এসেও স্যার নাইটদের সন্তানেরা বড় গলায় উঁচু করে বলে আমরা বিলেতী নাইট বা স্যারের ছেলে। আমাদের বাপদাদারাও ছিলেন ইংরেজ আমলের স্যার নাইট খান বাহাদুর খান সাহেব। গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র ও মানুষের মর্যাদা প্রতিস্ঠার যুগে এসব খেতাব পদক টাইটেল সত্যিই হাস্যকর। রাস্ট্র বা সরকার কেন কিছু মানুষকে নানা ধরনের পদক বা সম্মানী দেয়। সব সরকার সব সময়েই কিছু মানুষকে বিনা কারনে সম্মানিত করে নিজেদের পক্ষে অনুগত রাখতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে গণ বিদ্রোহ দেখা দিলে তখন সম্মানিতরা পালিয়ে থাকে।
আমরা এখনও বিভক্ত। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আমাদের জাতীয় ঐক্যমত প্রতিস্ঠিত হয়নি। আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগন নয়। আমাদের লক্ষ্য নিজের দল, নিজের মত, নিজের গোস্ঠি। ফলে বাংলাদেশের মানুষ ও দেশটা এতিমের মতো অন্ধকারে পড়ে থাকে। হিন্দু মুসলমান, শিয়া সুন্নী আহমদীয়া, পাহাড়ি বাংগালী ইত্যাদি নানা ভাগে আমরা বিভক্ত। আমাদের রাস্ট্রীয় নীতিও বিভক্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এক রকম আর বিএনপি আসলে আরেক রকম। একেবারে মূলনীতিতেই পরিবর্তন হয়ে যায়।যা কখনও দেশবাসীর কাম্য নয়। সীমান্তে কাঁটাতারের সাথে অভাগা ফেলানীর ঝুলে থাকা গুলিবিদ্ধ ছবি বাংলাদেশের সার্বভৌনত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকার এ ব্যাপারে তেমন কোন শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে সাধারন মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান দল আওয়ামী(জনগণ) লীগ সত্যিকারেরই জনগণের দল হিসাবে গড়ে উঠা উচিত ছিল। আওয়ামী লীগের ভুল নীতি ও গোস্ঠি প্রীতির কারনেই অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিকাশের সূযোগ এসেছে। আওয়ামী লীগ যদি প্রগতিবাদী বামপন্থী দল হয়ে থাকে তাহলে ডান বা দক্ষিণপন্থিদের একটি দল গড়ে উঠা একেবারেই স্বাভাবিক। দেশে রক্ষণশীল বা ডানপন্থি দল থাকবেনা এমন ভাবনা সুস্থ ভাবনা নয়। ভারতের মতো দেশেও কঠোর রক্ষণশীল দল আছে। পশ্চিমেতো বহু ডানপন্থি দল আছে। আওয়ামী ঘরানার সমর্থক ভক্ত ও তাদের চারিদিকে ঘুরে বেড়ানো দলগুলো মনে করে বিএনপি ধর্মপন্থি ডানমুখো দল। অথচ বিএনপি এখন দেশের অন্যতম বৃহত্ দল। এই দলটি না থাকলে ওই চিন্তাধারার মানুষগুলো কোথায় যেতো? বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ আওয়ামী চিন্তাধারার বিরোধিতা করলেই তাকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। অথবা তাদেরকে রাজাকার বলা হয়।ফলে এসব কথার কথায় পরিনত হয়েছে। ৭২ সালেই ইংরেজী সাপ্তাহিক হলিডেতে এনায়েতউল্লাহ খান লিখেছিলেন ‘ সিক্সটিফাইভ মিলিয়ন কোলাবোরেটর ’।মানে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তারা ছাড়া বাকি সবাই কোলাবোরেটর। বিষয়টা নিয়ে লিখে তখন এনায়েতউল্লাহ খান সবার প্রশংসা পেয়েছিলেন। তখন দেশে লোক সংখ্যা ছিল সাতকোট বা সাড়ে সাতকোটি। এখন ১৫ কোটি। তাহলে কত কোটি মানুষ কোলাবোরেটর বা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ? হয়ত শুধু রাজনীতির স্বার্থে আওয়ামী লীগ এবং তার বন্ধুরা এই শ্লোগান দিয়ে থাকে।
যেমন ধরুন, বাংগালী আর বাংলাদেশী। এ আরেক বিতর্ক। কেন জানিনা। শুধু রাজনীতির জন্যে এই বিতর্কের জন্ম দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে ৩০ কোটি বাংগালী আছে। কিন্তু বাংলাদেশী মাত্র ১৫ কোটি। ভারতের বাংগালীরা ভারতীয় বা ইন্ডিয়ান। আমাদের পাসপোর্টে লিখা রয়েছে জাতীয়তা বাংলাদেশী। এমন কি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্টেও। প্রখ্যাত বাংগালী কবি সাহিত্যিক সুনীল গংগোপাধ্যায়ের পাসপোর্টে লিখা রয়েছে ইন্ডিয়ান। কারন তিনি ভারতীয়। আমরা একই ভাষাভাষী হলেও দুই স্বাধীন দেশের বাসিন্দা। মধ্যপ্রাচ্যে বহু দেশে আরবী ভাষা প্রচলিত। কিন্তু দেশ আলাদা। ইংরেজী ইউরোপের বহুদেশের ভাষা। কিন্তু দেশ আলাদা, জাতীয়তা আলাদা। ইংরেজী ভাষী সবাইকে ইংরেজ বলা হয়না। আবার আরবী ভাষী সবাইকে আরব বলা হয়না। বিদেশে আপনি যদি বলুন আমি বাংগালী। তখন প্রশ্ন উঠবে আপনি কোন দেশের বাংগালী। আপনি বলবেন আমি বাংলাদেশী বাংগালী। সোজা কথায় বলতে গেলে বলতে হবে আমি বাংলাদেশী। তাতে ভাষাও বুঝা যাবে, দেশও বুঝা যাবে। নবাব সিরাজ উদ দৌলার আমলে বাংলা বিহার উড়িষ্যা নিয়ে ছিল সুবেহ বাংলা। সুবেহ মানে প্রদেশ বা রাজ্য। পুরো সুবেহ বাংলার আড়াই ভাগ এখন ভারতে। তিন ভাগের একভাগ বাংলাদেশ। পাকিস্তান আমলে মুসলমানের দেশ বলে এই অঞ্চল ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এখন বাংগালী বলে বাংলাদেশ। পশ্চিম বাংলায় ৬০/৭০ ভাগ অধিবাসী ধর্মীয় ভাবে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী বলে ভারতে রয়ে গেছে। এই বাংলায় মানে বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ অধিবাসী বাংলাভাষী মুসলমান বলে আলাদা একটা দেশ গঠণ করেছে। ভাষাগত ভাবে বাংগালী হলেও এই ধর্মীয় কারনে এই অঞ্চলে একটা আলাদা একটা জাতিসত্তা গড়ে উঠেছিল। একই পুকুরে গোসল/স্নান করেও একজন বলছে জল,আরেক জন বলছে পানি। একজন সূর্যকে প্রণাম করছে, আরেকজন আজানের ধ্বনি শুনে মসজিদের দিকে যাচ্ছে। অর্থনেতিক কারনে পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম বাংলার অনেক পেছনে পড়ে গিয়েছিল। পূর্ব বাংলা ছিল মূলত: গরীব মুসলমান কৃষক প্রজার দেশ। কোলকাতা ছিল ইংরেজ কোম্পানীর রাজধানী। সেখানেই বাস করতো সাহেব আর বাবুরা। এই অঞ্চল ছিল কোলকাতার বাবু আর সাহেবদের শোষনের জায়গা। ফলে পূর্ব বাংলা দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৯০৫ সালে পেছনে পড়ে থাকা অঞ্চল হিসাবে পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠন করা হয়। ঢাকা ছিল সেই প্রদেশের রাজধানী। প্রদেশের প্রথম গভর্ণরের বাসস্থান ছিল পুরাণো হাইকোর্ট বিল্ডিং। পরে এক সময় তা চলে যায় বর্তমান বংগভবন এলাকায়। কিন্তু নতুন প্রদেশ গঠনকে কোলকাতার বাবুরা সমর্থন করেননি। এমন কি আমার প্রিয় কবিগুরুও সমর্থন করেন নি। ১৯১১ সালে নতুন প্রদেশ গঠন বাতিল হয়ে যায়। পূর্ব বাংলার মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করার সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠার ওয়াদা করে।কোলকাতার বাবুরা প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিস্ঠার বিরোধিতা করে এবং মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় বলে তামাশা করতে থাকে। সব বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরু হয়।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন বংগদেশ( পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা ) প্রতিস্ঠার জন্যে হিন্দু-মুসলমান বাংগালীরা যৌথভাবে চেস্টা করলেও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা নেহেরুজী ও গান্ধীজী রাজি হননি। কারণ বৃহত্ বংগদেশে মুসলমানরা ছিল মেজরিটি। কংগ্রেস চায়নি ভারতের দুই দিকে দুটি মুসলমান প্রধান দেশ থাকুক। তাছাড়া, ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বংগদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনজন মুসলমান নেতা। তাঁরা হলেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, স্যার খাজা নাজিম উদ্দিন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এ কারনেও হিন্দু নেতারা ভেবেছেন বাংলা অবিভক্ত থাকলে পুরো নেতৃত্ব চলে যাবে মুসলমানদের কাছে। এসব খুবই পুরাণো কথা। অনেকেই জানেন। কোথাও আমার স্মৃতি ব্যর্থ হতে পারে।ভুল থাকলে শুধরে দিলে বাধিত হবো। নবিন ও যুবক বন্ধুদের জন্যে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম।