ব্লগ
ভূমি সম্পর্কিত সকল তথ্য পেতে অনুসন্ধান করুন
সাম্প্রতিক খবরা-খবর
ভূমি সেবা: ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভুক্তভোগীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। এক জমি একাধিক ব্যক্তির নামে বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাজনা পরিশোধ, দলিল উত্তোলনসহ ভূমি অফিসের যেকোনও কাজ ঘুষ ছাড়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ প্রক্রিয়ারই অংশ হচ্ছে ই-মিউটেশন বা ই-নামজারি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র সরকারের এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান বাদে বাকি ৬১ জেলায় ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্কেল অফিস এবং তিন হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারির কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে সারাদেশে এক কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৩৯ জন সুবিধাভোগী ই-নামজারির কার্যক্রম থেকে সুবিধা পেয়েছে। এ সংক্রান্ত ৬ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে।
জানা গেছে, ই-নামজারি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ফৌজদারি মামলা, ভোগান্তি ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমছে। এর ফলে নথি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলেও সমস্যা হবে না। এতে নাগরিকের সময়, খরচ ও যাতায়াত যেমন কমবে তেমনি খতিয়ানের স্থায়িত্ব বাড়বে। ডিজিটাল সেন্টারগুলোর আয় বাড়ছে। সরকারি ও ভিপি জমি (ভেস্টেট প্রোপার্টি) বা সম্পত্তি সুরক্ষা পাবে। বড় কথা হচ্ছে ই-নামজারির ফলে এক জমি একাধিকবার একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি, নামজারি ও রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হবে।
সূত্র জানায়, আরএস খতিয়ান সিস্টেম (আরএস-কে) ডিজিটাইজড করার অংশ হিসেবে এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত আরএস খতিয়ান অনলাইনে প্রদর্শন ও বিতরণের লক্ষ্যে আরএস খতিয়ান সিস্টেম তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট ৫৩টি জেলার ৩২১টি উপজেলায় এক কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৭০১টি খতিয়ান এন্ট্রির কাজ শেষ এবং তা আরএস-কে সিস্টেমে প্রকাশিত হয়েছে। বাকি জেলার জন্য প্রস্তুত করা প্রায় দুই কোটি আরএস রেকর্ডের উপাত্ত আরএস-কে সিস্টেমে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও অনলাইনে প্রদর্শনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
জমি দখল-জালিয়াতি প্রতিকারে আইন হচ্ছে
সরকার এরই মধ্যে ডিজিটাল রেকর্ডরুম চালু করেছে। এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের সব ভূমি রেকর্ডকে (খতিয়ান) ডিজিটাল করার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড রুম সার্ভিস (ডিএলআরএস) নামে একটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে জেলা রেকর্ড রুমে সিএস, এসএসহ অন্যান্য খতিয়ান ডিজিটাইজড করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আওতায় পর্যায়ক্রমে ভূমি ব্যবস্থাপনার অন্য বিষয়গুলো ডিজিটাইজড করা হবে। ইতোমধ্যে ভূমি বিষয়ক ৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় মোট মামলা হয়েছে ১০ লাখ।’
তিনি জানান, সরকারের অল্প সময়ে এক কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৩ জন সুবিধাভোগী ই-নামজারি থেকে সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৫টি নামজারি আবেদন দাখিল হয়েছে অনলাইনে। মন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা জুলাই থেকে সারা দেশে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। তবে তিনটি পার্বত্য জেলা এই কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিস এবং তিন হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’
প্রচলিত পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করে ভূমি মন্ত্রণালয়। যেমন প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪২ লাখ জমি রেজিস্ট্রেশন হয় এবং উত্তরাধিকারমূলে আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ নামজারির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু মালিকানা হালনাগাদ হয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ। প্রায় ৩০ লাখ জমির হস্তান্তর নামজারি ও রেকর্ড হালনাগাদের বাইরে থেকে যায়। ফলে নাগরিকের সময়, খরচ ও যাতায়াত বেশি হয়। এছাড়া নামজারি হওয়ার পর রেকর্ড হালনাগাদ না করায় একই জমি একাধিক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এর ফলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সৃষ্টি হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাইজড হলে এসব সমস্যা দূর হবে বলে জানান ভূমিমন্ত্রী।
জালিয়াতির শিকার প্রকৃত ভূমি মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আইন হলে জাল দলিল করে প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি দখল ও প্রতারণা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তি সহজ হবে।
সোমবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘ভূমি-সংক্রান্ত কাগজ জালিয়াতি প্রতিরোধে প্রস্তাবিত নতুন আইন’ বিষয়ক এক কর্মশালায় আইনটি প্রণয়নের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
জমি দখল-জালিয়াতি প্রতিকারে আইন হচ্ছে
জানা যায়, খাস জমি দখল, জাল দলিল তৈরি, বালু ফেলে নদীর জমি দখলসহ জমি-সংক্রান্ত সব ধরনের জালিয়াতির বিষয়ে আইন প্রণয়নে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা মতামত ব্যক্ত করেন। এতে আইন বিশেষজ্ঞ, মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। ভূমি সচিব, বিশেষজ্ঞ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামতে আইনটি প্রণয়নের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, মো. মাসুদ করিম, মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস, আকতারুজ্জামান, ড. কাজী জাহেদ ইকবাল ও খন্দকার শাহরিয়ার শাকিব প্রমুখ।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে ভুয়া সনদ দিয়ে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক লাইসেন্স নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই লাইসেন্স দিয়ে তাঁরা দলিল লেখার কাজ করছেন।
কয়েকজন দলিল লেখক ও ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে মোট ২৫২ জন দলিল লেখক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক রয়েছেন, যাঁদের এসএসসি পরীক্ষার সনদ ভুয়া। ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো সনদ ছাড়াই দলিল লেখক নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু সরকার ২০০৩ সালে দলিল লেখকদের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী একজন দলিল লেখককে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। বর্তমানে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক দলিল লেখক রয়েছেন, যাঁদের এসএসসি পাসের কোনো সনদ নেই। তাঁরা এসএসসি পরীক্ষার ভুয়া সনদ তৈরি করে দলিল লেখকের লাইসেন্স নিয়েছেন। প্রতিবছরই সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সনদ নবায়ন করা হয়। দলিল লেখক সমিতির চাঁদার টাকা থেকে সব দলিল লেখকের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। অফিসের একজন সহকারী দিয়ে সমিতির চাঁদা আদায় করা হয় জমির ক্রেতার কাছ থেকে।
এই বছরের প্রথম দিকে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার তাঁর কার্যালয়ের দলিল লেখকদের এসএসসি পাসের মূল সনদ চেয়ে লাইসেন্স নবায়নের নির্দেশ দেন। পরে ২০১ জন দলিল লেখক এসএসসি মূল সনদ দিয়ে তাঁদের লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেন। এরপর ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের একটি তালিকা করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য সুপারিশপত্রসহ জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠান। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে ৫১ জন দলিল লেখক তাঁদের এসএসসি পরীক্ষার সনদ জমা দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ৬ মার্চ জেলা রেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের মূল সনদের দুই কপি করে ফটোকপি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ভালুকার ১০৭ জন দলিল লেখক তাঁদের সনদ জমা দেন। ওই ১০৭ জনের মধ্যে ১৫ জন তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ দিতে পারেননি। ওই ১৫ জন দলিল লেখকসহ বর্তমানে মোট অর্ধশতাধিক দলিল লেখক ভুয়া লাইসেন্স দিয়েই দলিল লিখে যাচ্ছেন। এসব দলিল লেখক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে বছরের পর বছর দলিল করে যাচ্ছেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম ভূমিবিডি কে বলেন, দলিল লেখকদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য তিনি জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর তালিকা পাঠিয়েছেন। লাইসেন্স করা যেসব দলিল লেখক তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি জমা দেননি, তাঁদের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর মুঠোফোনে প্রথম ভূূূূূমিবিডি কে বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়া সনদপত্রের বিষয়টি তিনি অবগত নন। যদি কোনো দলিল লেখক ভুয়া সনদপত্র দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরগুনার আমতলী উপজেলার ঘোপখালী গ্রামে রাতের আঁধারে ঘর তুলে আব্দুল হাকিম হাওলাদার ও তার লোকজন জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমির মালিক মো. শাহ আলম গাজী এমন অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার শাহ আলম গাজী আমতলী থানায় আব্দুল হাকিম, বারেক ও ওহাবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই দিন বিকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের মো. শাহ আলম গাজী ও আব্দুল হাকিম হাওলাদারের সাথে ৭.২৩ একর জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ২০০২ সালে ওই জমি নিয়ে বরগুনার দেওয়ানি আদালতে মামলা হয়। ২০১৬ সালে ওই মামলায় রায় হয়। কিন্তু এ রায় উভয় পক্ষ তাদের পক্ষে হয়েছে বলে দাবি করেন। এ নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে দুইপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার রাতে ওই জমিতে আব্দুল হাকিম হাওলাদার, বারেক হাওলাদার ও ওহাব হাওলাদার অর্ধ শতাধিক লোকজন নিয়ে ঘর তুলে জমি দখল করে। ওই জমিতে তারা অস্থায়ী খড়ের ঘর ও কলাগাছ রোপণ করেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার শাহ আলম গাজী আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই দিন বিকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
শাহ আলম গাজী বলেন, আমার কবলাকৃত জমির ধান আব্দুল হাকিম হাওলাদার ও তার লোকজন কেটে নিয়েছে। ওই জমি আবার তারা দখলের জন্য রাতের আঁধারে ঘর তুলেছে। আমি আমার জমি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আব্দুল হাকিম হাওলাদার বলেন, ওই জমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমার জমিতে আমি ঘর তুলেছি। তবে রাতের আঁধারে ঘর তুলেছেন কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আমতলী থানার এসআই জিএম শাহাবুল বলেন, ওসির নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
আমতলী থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জমি ও জমি সম্পর্কিত দখল-জালিয়াতির কারণে হয়রানির শিকার হওয়া প্রকৃত মালিকদের দ্রুত প্রতিকার দিতে নতুন একটি আইনের খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সোমবার ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ভূমি সংক্রান্ত কাগজ জালিয়াতি প্রতিরোধে প্রস্তাবিত নতুন আইনবিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এ সময় ভূমি সচিব সবার মতামত গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা দলিল জালিয়াতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত জানান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আলোচক ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ করিম, মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, প্রদীপ কুমার দাস ও যুগ্মসচিব কামরুল হাসান ফেরদৌস। আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস, আকতারুজ্জামান, কাজী জাহেদ ইকবাল ও খন্দকার শাহরিয়ার শাকিব।
আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন ও জরিপ শাখার যুগ্মসচিব ও উপসচিবরা। মাঠপর্যায়ে কর্মরত আমন্ত্রিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও অধিগ্রহণ), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা।
মুসলিম উত্তরাধিকারি আইন
বিদেশে থেকে জমি ক্রয় বিক্রয় করার পদ্ধতি
লিজকৃত জমি সাব-লিজ দেওয়া যাবে না কিংবা জমির শ্রেণি/আকার/প্রকার কোনোরূপ পরিবর্তন করা যাবে না মর্মে অনুচ্ছেদ যুক্ত করে গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে জারীকৃত অর্পিত সম্পত্তির অস্থায়ী ইজারার সালামির হার পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক পরিপত্রের কিছু সংশোধন করে ৬ জানুয়ারি আরেকটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে জারীকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত অনুচ্ছেদ-৫ প্রতিস্থাপনের কথাও বলা হয়েছে সংশোধনী পরিপত্রে। সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জমির মালিকানা যাচাই করে নিন….
প্রতিস্থাপিত সংশোধিত অনুচ্ছেদটি হচ্ছে – অস্থায়ীভাবে ইজারাকৃত প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির মেরামতের ক্ষেত্রে ইজারা গ্রহীতা জেলা প্রশাসক/উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতিক্রমে অবকাঠামোর কোনোরূপ পরিবর্তন না করে অথবা কোনো নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করে নিজ ব্যয়ে বর্তমান স্থাপনার প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ করতে পারবেন। তবে মেরামত বাবদ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বার্ষিক ইজারার টাকার সর্বোচ্চ ৫% ব্যয় করা যাবে।
পূর্বের পরিপত্রের সঙ্গে দুটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে সংশোধনীতে। অনুচ্ছেদগুলো হচ্ছে – “ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত পরিপত্র মোতাবেক চালুকৃত অর্পিত বাড়ি-ঘরের সালামি বর্গফুট নির্ধারণের হার বহাল থাকবে। তবে, বাড়ি ঘরের অবস্থা ও অবস্থান বিবেচনা করে নির্ধারিত ভাড়ার সর্বোচ্চ ১০% কম-বেশি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতা, ব্যাখ্যাসহ সুপারিশ বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে;” এবং “খালি জমি ইজারা নিয়ে জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে নিজ খরচে ঘর উঠালে সে ক্ষেত্রে উক্ত খালি জমির নির্ধারিত ইজারা মূল্যের সঙ্গে অবকাঠামোর জন্য নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত হিসেবে আরও ২০% ইজারা গ্রহীতা কর্তৃক পরিশোধ করতে হবে।”
সংশোধনীতে ২০১৯ সালে জারিকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৬, ৭ এবং ৮ যথারীতি বহাল থাকার কথা বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, লিজ-গ্রহীতা এবং জেলা প্রশাসকগণের মতামতের ভিত্তিতে সালামির অর্থ আদায়যোগ্য এবং জনবান্ধব করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের ৩১.০০.০০০০.০৪৫.৫৩.০০২.১৬-৬১৯ নম্বর স্মারকে “অর্পিত সম্পত্তির অস্থায়ীভিত্তিতে ইজারার সালামির হার পুন:নির্ধারণ” বিষয়ক পরিপত্র জারি করে। জনস্বার্থে উক্ত পরিপত্রের কিছু সংশোধন করে গত ৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ৩১.০০.০০০০.০৪৫.৫৩.০০২.১৬-৪২ স্মারকে ভূমি মন্ত্রণালয় “অর্পিত সম্পত্তির অস্থায়ী ইজারার সালামির হার পুন:নির্ধারণে কতিপয় সংশোধন” বিষয়ক সংশোধনী পরিপত্রটি জারি করে।
২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখার নিয়ম
জমি বিক্রির দলিল রেজিস্ট্রি
জমি বিক্রির জন্য জমির বায়নানামা (বিক্রির চুক্তিপত্র) সম্পন্ন করা হলে তা রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমির বায়নানামা সম্পাদনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে বায়নাটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। আর শর্ত অনুযায়ী বায়নার চুক্তি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করার সব পদ্ধতি মেনে সাব-কবলা দলিলটি সম্পাদিত হলে সম্পাদনের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে সাব-কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করাতে হবে। আইন অনুযায়ী, তিন মাস পার হয়ে গেলে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার সুযোগ আছে।
দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় সতর্কতা
কোনো দলিল আইনগত ও যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পাদনের পর রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমেই জমির সব দলিল-দস্তাবেজ ও মালিকানা যাচাই করতে হবে। দলিলটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে খসড়াটি ভালো করে যাচাই করতে হবে। দলিলে কোনো ভুল থাকলে ও রেজিস্ট্রি হলে এটি সংশোধনের ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই করের মাত্রা কমানোর জন্য জমির দাম কম দেখানো হয়। এতে ভবিষ্যতে কিছু প্রতিকার পেতে ঝামেলা হয়। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরপরই নকল তুলতে হবে এবং এটি তুলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে ভুলভ্রান্তি আছে কি না। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় একটি রসিদ দেওয়া হয়। এই রসিদ মূল দলিল ওঠানোর সময় দেখাতে হয়। কোনো সম্পত্তির আংশিক এক জায়গায় এবং বাকি অংশ অন্য জায়গায় পড়লে বেশির ভাগ অংশ যে এলাকায় পড়বে, সেখানের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করতে হবে। কোনো বিশেষ কারণে দলিলদাতা বা গ্রহীতা অসুস্থ হলে সাব-রেজিস্ট্রারকে বাসায় নিয়েও রেজিস্ট্রি করা যায়। মনে রাখতে হবে, দলিল কার্যকর হয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকেই, অর্থাৎ যে তারিখে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই তারিখ থেকে, দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে নয়। বাংলাদেশের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হলে দলিলটি যেদিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে, সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রি ফি
বায়নাপত্র: সম্পত্তির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি ৫০০ টাকা। পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে ফি এক হাজার টাকা। মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা।
বন্ধক দলিল: বন্ধকি অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি বন্ধকি অর্থের ১ শতাংশ এবং ২০০ টাকার নিচে ও ৫০০ টাকার বেশি নয়। অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কিন্তু ২০ লাখ টাকার নিচে হলে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে তা এক হাজার ৫০০ টাকার কম নয় এবং দুই হাজার টাকার বেশিনয়।
বন্ধকি অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। তবে তা তিন হাজার টাকার কম নয় এবং পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না।
হেবা ও দানপত্র: মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রে হেবানামা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে দানপত্র যদি স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি ও সহোদর ভাইবোনের মধ্যে হয়, তাহলে রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা।
বণ্টননামা দলিল: সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ৫০০ টাকা, তিন লাখ টাকার বেশি এবং ১০ লাখ টাকার কম হলে ৭০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৩০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ২০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং সম্পত্তির মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা ফি দিতে হবে।
জমির মালিকানা
জমির মালিকানা যাচাই করে নিন।জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ভাবছেন খুব ভালো জমি। দরদামও আয়ত্তের মধ্যে। জমি কেনার দলিল সম্পাদন করে নিলেই হলো। জমির মালিক হয়ে যাবেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে কিনতে গিয়ে বিপদেও পড়তে পারেন।
জমি কেনার আগে জমির ক্রেতাকে জমির বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভালো করে যাচাই করতে হবে। অন্যথায় জমি কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হতে হবে। কিংবা জমির মূল অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
জমি নিয়ে বিরোধ হলে কী করতে হবে?
মালিকানা যাচাই না করে জমি কিনলে ভবিষ্যতে মামলা-মোকদ্দমায়ও জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় একজনের নাম করা জমি অন্য একজন ভুয়া দলিল দেখিয়ে বিক্রি করেছেন। পরে আসল মালিক ক্রেতাকে জড়িয়েও মামলা ঠুকে দেন।
জমির বিভিন্ন ধরনের দলিল থাকতে পারে। বিক্রয় দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল। ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সবশেষে যে দলিল করা হয়েছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না। বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়। ধরা যাক, আপনি কিছু জমি ১৯৯০ সালে ৪৭০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০০৮ সালে অন্য একজনের কাছে ৫২০ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ৪৭০ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল।
হস্তান্তর করা দলিলে দাতা এবং গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, জোত নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে, যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। অনেক সময় আগের দলিলের চেয়ে পরের দলিলে বেশি জমি দেখানো হয়।
খতিয়ানের ক্ষেত্রে আগের খতিয়ানগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ খতিয়ানের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতে হবে।
মিউটেশন বা নামজারির মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সে মতো খতিয়ানে দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করতে হবে। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি, তা দেখা দরকার। যদি বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না। দেখতে হবে মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং নামজারি যদি না হয় তাহলে কী কারণে হলো না তা জানতে হবে। মিউটেশন না করা থাকলে জমি কিনতে সমস্যা হবে।
খেয়াল রাখতে হবে, দাগ নম্বরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না। জমি যাঁর কাছ থেকে কিনবেন তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখতে হবে। ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান বা হেবামূলে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে যদি কেউ কোনো জমি বিক্রি করতে চান তাহলেও মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। অনেক সময় ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। জমি কেনার ক্ষেত্রে সেটা সরকারি মালিকানা বা অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না, অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে।
যেকোনোভাবেই হোক না কেন, জমির মালিকানা যাচাই না করে জমি কেনা বোকামি। অনেক সময় জমিজমা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলাকালে প্রকৃত তথ্য গোপন করেও অনেকে জমি বিক্রি করে দেন। তাই মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি জেনে নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক সময় জমি নিয়ে অগ্রক্রয়ের মামলাও হতে পারে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। কোনোভাবে জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারীকে শতভাগ বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। ক্রেতা নিজেকেই মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে কিংবা যাচাই-বাছাই করে জমি কিনতে হবে। না হলে মালিকানা-সংক্রান্ত একটু জটিলতা সারা জীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে আর মামলা-মোকদ্দমার হয়রানি তো আছেই।
এখন থেকে অনলাইনে মাত্র পাঁচ মিনিটে জমির খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় এই পদ্ধতিতে land.gov.bd বা rsk.land.gov.bd বা www.minland.gov.bd বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করা যাবে।
এর আগে, গত বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ‘হাতের মুঠোয় খতিয়ান’ স্লোগানে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আরএস খতিয়ান অনলাইনে অবমুক্তকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া দেশে প্রায় ৬১ হাজার ৫০০ মৌজা রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ হাজার মৌজার জরিপ সম্পন্ন হয়েছে, এর প্রায় ৩২ হাজার মৌজার জরিপে প্রকাশিত এক কোটি ৪৬ লাখ আরএস (১৯৬৫ সাল থেকে চলমান জরিপে প্রস্তুত করা খতিয়ান) খতিয়ানের তথ্য অনলাইনে পাওয়ার সুযোগ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানান, জরিপ কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং জরিপ শেষ হয়েছে এমন খতিয়ানগুলো পর্যায়ক্রমে আপলোড করা হবে। জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর চূড়ান্তভাবে গেজেট প্রকাশিত খতিয়ানও এসব লিংকে আপলোড করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
যেভাবে অনলাইনে পাওয়া যাবে খতিয়ান: অনলাইনে জমির খতিয়ান সংগ্রহের জন্য ওয়েবসাইটে সব নাগরিকের জন্য নাগরিক কর্ণার রয়েছে। অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা বাছাই করতে হবে। খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর বা মালিকানা নাম বা পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে খতিয়ান খোঁজা যাবে। এছাড়া খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য অনলাইনে আবেদন, আবেদন নিষ্পত্তি বিষয়ে ট্র্যাকিং ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনিটরিং করার সুবিধা রয়েছে এই অনলাইন ব্যবস্থায়। অনলাইনে খতিয়ানের কপি পেতে অনলাইনে আবেদনের সময় নাগরিকের নাম, পরিচয়পত্র নম্বর, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। নির্ধারিত তথ্য দেয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধের পর অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে চাইলে সরাসরি অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নেয়া যাবে।
জমি নিয়ে বিরোধ হলে কী করতে হবে?
সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সময় নাগরিকের তথ্য প্রদানের পর মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে খতিয়ানের জন্য ফি দিতে হবে। ফি দেয়ার পর সার্টিফাইড কপির জন্য নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, ট্রানজেকশন আইডি ও ডাকযোগে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা অফিস থেকে বা আবেদনকারীর প্রত্যাশিত ঠিকানায় ডাকযোগে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হবে।
কী কী যাচাই করতে হবে:
অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখার নিয়ম
১. জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে।
২. জমির তফসিল অর্থাৎ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ জানতে হবে।
৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিএস; এসএ; আরএস পরচা দেখাতে হবে।
৪. বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে ভূমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্রয় দলিল বা ভায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা নিশ্চিত হতে হবে।
৫. বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ান বিক্রেতা বা তিনি যাঁর মাধ্যমে প্রাপ্ত তাঁর নামে অস্তিত্ব (যোগসূত্র) মিলিয়ে দেখতে হবে।
৬. জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার কাছে রক্ষিত মাঠ পরচা যাচাই করে দেখতে হবে।
৭. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরিকদের সঙ্গে বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টননামা (ফরায়েজ) দেখে নিতে হবে।
৮. বিক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহীত দলিল, খতিয়ান/পরচা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী /স্বত্বলিপি রেজিস্টারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৯. সর্বশেষ নামজারি পরচা ডিসিআর খাজনা দাখিল (রসিদ) যাচাই করে দেখতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায় ক্রেতার।
১০. বিবেচ্য জমিটি সার্টিফিকেট মোকদ্দমা ভুক্ত কি না, কখনো নিলাম হয়েছে কি না, তা তহশিল অফিস / উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জেনে নিতে হবে। সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয়।
১১. বিবেচ্য ভূমি খাস, পরিত্যক্ত/অর্পিত, অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশকৃত কি না, তা তহশিল, উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
১২. বিবেচ্য ভূমি কোনো আদালতে মামলা–মোকদ্দমাভুক্ত কি না, তা জেনে নিতে হবে। মামলাভুক্ত জমি কেনা উচিত নয়।
১৩. বিবেচ্য জমিটি সরেজমিনে যাচাই করে এর অবস্থান নকশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং দখল সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিক্রেতার মালিকানা ও দখল নিশ্চিত হতে হবে।
১৪. সাব–রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ বেচাকেনার তথ্য জেনে নেওয়া যেতে পারে।
১৫. প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোনো ব্যাংক /সংস্থার কাছে দায়বদ্ধ কি না।
১৬. প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কি না, তা–ও দেখা প্রয়োজন।
অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখার নিয়ম
জমি কেনার আগে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বিক্রেতার মালিকানা এবং জমির বিভিন্ন দলিল ভালোভাবে যাচাইবাছাই করতে হবে; নইলে পড়তে পারেন বিপদে, এমনকি প্রতারিতও হতে পারেন। জমির দলিলপত্র যাচাই না করে জমি কেনা উচিত নয়।
ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান সেবা প্রদানকারী অফিসের নাম দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী সেবা প্রাপ্তির স্থান প্রয়োজনীয়…
সেবা প্রদানকারী অফিসের নাম | দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারী | সেবা প্রাপ্তির স্থান | প্রয়োজনীয় সময় | |
উপজেলা ভূমি অফিস | অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রা)/উপজেলা নির্বাহী অফিসার/সহকারী কমিশনার (ভূমি) | উপজেলা ভূমি অফিস | সাধারণত৬০-৯০ দিন | |
সেবা প্রদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ | আবেদন প্রাপ্তির পর আবেদনকারী প্রকৃত ভূমিহীন কি-না তা ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকাশ্য সভা আহ্বান করে উপজেলাকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটি কর্তৃক যাচাই করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা ভূমি অফিসে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি (রেজিস্টার-১২) দিয়ে সরেজমিন তদন্ত ও রেকর্ডপত্র যাচাই অন্তে প্রস্তাব / প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়। চাহিত ভূমির অবস্থান ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে প্রস্তাব / প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়। প্রাপ্ত প্রস্তাবের উপর উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো/ সার্ভেয়ারের মতামত গ্রহণ এবং আবেদন সংশ্লিষ্ট কৃষি খাস জমির স্কেচ ম্যাপ তৈরি করা হয় । অত:পর বন্দোবস্ত প্রস্তাব উপজেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় উপস্থাপননেরপরতাঅনুমোদিতহলেপরেতা জেলা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।জেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটিকর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক কবুলিয়ত সম্পাদন এবং সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয় এবং ভূমিহীনদের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়ানামজারি ও জমাভাগকরণ এবং রেকর্ড সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।রেকর্ড সংশোধনঅন্তে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তামিল প্রতিবেদন উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন হয়ে থাকে। | |||
সেবা প্রাপ্তির শর্তাবলি | কৃষিখাসজমিব্যবস্থাপনাওবন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৭ এ বর্ণিত শর্তাবলি যেমন-১) ভূমিহীন হতে হবে২) কৃষি খাস জমির জন্য আবেদন হতে হবে | |||
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | ১. আবেদনপত্র, ছবি২. আবেদনকারীর ছবি স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেম্বার দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে৩. ভূমিহীনের সনদ৪. স্থানীয় চেয়ারম্যানের সনদ/জাতীয় পরিচয় পত্র | |||
প্রয়োজনীয় ফি/ট্যাক্স/আনুষঙ্গিক খরচ | সালামি – ১ টাকারেজিস্ট্রেশন ফি – ২৪০ টাকা | |||
সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি/নীতিমালা | ১. কৃষিখাসজমিব্যবস্থাপনাওবন্দোবস্তনীতিমালা১৯৯৭২. এসএ এ্যান্ড টি এ্যাক্ট ১৯৫০৩. ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০৪. ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪ | |||
নির্দিষ্ট সেবা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিকারকারী কর্মকর্তা | জেলা প্রশাসক | |||
সেবা প্রদান/ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধাসমূহ | ক)নাগরিক পর্যায় | ১. ভূমি বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানেরঅভাব২. দখল না পাবার আশংকা | ||
খ)সরকারি পর্যায় | ১. নিষ্কন্টক খাস কৃষি জমি চিহ্নিত করা২. মামলার সংশ্লিষ্টতা৩. প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাব৪। দখল পুনরুদ্ধার |
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এদেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। ১৫ কোটি জনসংখ্যাপূর্ণ বাংলাদেশের মাথাপিছু জমির পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। এ দেশে মাথাপিছু জমির পরিমাণ প্রায় .৩০ একর। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ি-ঘর, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, রাস্তা-ঘাট, শিল্প-কারখানা, শহর, বন্দর ইত্যাদি। দেশের শতকরা ২৫ ভাগ আবাদি জমি মাত্র ২% লোকের মালিকানায়। পক্ষান্তরে ৪.৮% আবাদি ভূমি ৫০% চাষীর মালিকানায়। জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ২০.৮৩% এবং মোট শ্রমশক্তির ৪৮.১০% কৃষক। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের চাষযোগ্য ভূমি জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল।
জনসংখ্যার অত্যাধিক চাপের কারণে বাংলাদেশে সব ধরনের জামির চাহিদা বেড়েই চলছে। কাজেই বাড়িঘর নিমার্ণ করার জন্য এখানে জমি পাওয়া বেশ কষ্টকর। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে আবাসিক সংকট নিরসনে জমি পাওয়া গেলেও তার দাম অনেক বেশি। এঅবস্থায় দালাল বা প্রতারকচক্র এসে কোনো আগ্রহী ক্রেতাকে “সস্তায় ভাল জমির’ খবর দেন তখন জমি যাতে হাত ছাড়া না হয় তার জন্য ক্রেতা দ্রুত বায়না ও রেজিষ্ট্রি করে মূল্য পরিশোধ করে জমি দখল করতে যান। জমি দখল করতে গিয়ে অনেক সময় ক্রেতা দেখেন যে, (১) বিক্রেতা ওই জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে দখলকার ছিলেন না (২) ওই জমি নিয়ে অন্য অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিবাদ চলেছে (৩) বিক্রেতা ইতিপূর্বে বার বার জমি বিক্রি করার পর তথায় তার বিক্রি যোগ্য কোনো স্বত্ব ছিল না (৫) ইহা অর্পিত সম্পত্তি (৬) সরকার কর্তৃক হুকুম দখল হয়েছে (৭) যে ওয়ারিশ সূত্রে বিক্রেতা মালিকানা দাবি করেছে তা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ অবস্থায় ক্রেতার মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা। দালাল বা প্রতারকচক্র ইতিমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে। সরল ক্রেতা জমি উদ্ধারের জন্য দেওয়ানী আদালতের আশ্রয় নেন। দীর্ঘকাল মামলায় হাজিরা দিতে দিতে মামলা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত ক্রেতাকে সকলে নির্বুদ্ধিতার জন্য অপবাদ দেয়।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের অনেকেই জমি কেনার জন্য দালালের মাধ্যমে ‘সস্তার ফাঁদে পা দেন’। সব চেয়ে বেশি এ ফাঁদে পা দেন সদ্য বিদেশ হতে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তিরা এবং সরকারি কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। সীমিত সামর্থ্যের কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারগণ অনেক সময় সস্তায় জমি কেনার সুযোগ খুঁজেন এবং অনেক সময় সস্তায় কিনে দীর্ঘকাল ঝামেলায় ভোগেন। আবার অনেক সময় বিরোধপূর্ণ জমি উদ্ধারের জন্য কোনো কোনো পক্ষ সন্ত্রাসী ও ভাড়াটিয়া মাস্তানদের ব্যবহার করে। ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামার সূত্রপাত হয়। দাঙ্গা হাঙ্গামার ফলে অনেকে খুন ও জখমপ্রাপ্ত হন। বিরোধপূর্ণ জমি দখলের সময় বাড়ি ঘরে হামলার ফলে মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বিনষ্ট করা হয়। এভাবে জমি দখল করতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। এর জন্য দায়ী সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে সমস্যাপূর্ণ জমি ক্রয় করা।
ভূমি মালিকানার উৎস :
ভূমি মালিকানার বিরোধ অনেকাংশে ভূমি মালিকানার উৎসের সাথে জড়িত। মালিকানার উৎস নিন্মোক্তভাবে হয়ে থাকে। যথা- ক) উত্তরাধিকার তথা ওয়ারিশ সূত্রে, খ) বিক্রয় ও ক্রয় সূত্রে, গ) ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্তির সূত্রে, ঘ) নিলাম ক্রয় সূত্রে, ঙ) সিকস্তি ও পয়স্তি সূত্রে, চ) আদালতের রায় মূলে ছ) ভূমি অধিগ্রহণ মূলে জ) দান, ওয়াকফ, হেবা, উইল ইত্যাদি সূত্রে, ঝ) লিজ বা ইজারা দলিলমূলে, ঞ) বিনিময় বা এওয়াজ দলিলমূলে, ট) বন্ধকী দলিল সূত্রে, ঠ) ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ১১৭, ১৪৩ ও ১৪৪ ধারা মূলে।
জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতা সাধারণের কর্তব্য :
জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রেতা কর্তৃক কিছু তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে দেখা আবশ্যক। ১। জমি বিক্রেতার প্রকৃত মালিকানা স্বত্ব আছে কিনা, ২। মালিকানার প্রমাণ হিসেবে বিক্রেতার নামে সর্বশেষ জরিপের এস,এ রেকর্ড অথবা আর,এস, রেকর্ড আছে কিনা। রেকর্ড/ খতিয়ানের মূল কপি বা সত্যায়িত কপি দেখে নিশ্চিত হতে হবে, ৩। বিক্রেতা যদি ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকেন তা হলে তার নামে মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কিনা, ৪। বিক্রি প্রস্তাবিত জমির দখল যাচাই করা, ৫। খাজনার দাখিলা যাচাই করা, ৬। বিক্রি প্রস্তাবিত জমির দাগ নম্বর এবং খতিয়ান নম্বর জেলা রেকর্ড রুমের রেকর্ড এবং উপসহকারী ভূমি অফিসের রেকর্ড যাচাই করে জমির মালিকানা সূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে, ৭। অনেক সময় অসাধু দালাল ও ভূমি মালিক সরেজমিনে এক জমি দেখায় এবং রেজিষ্ট্রি করার সময় অন্য দাগ নম্বর রেজিষ্ট্রি করে দেয়। এ অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেতে হলে রেজিষ্ট্রি করার পূর্বে রেকর্ড, নকশায় ও সরেজমিনে জমির দাগ নম্বর সনাক্ত করতে হবে, ৮। কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেকর্ডীয় মালিকানায় অংশীদারগণ অগ্রক্রয়াধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সুতরাং অংশীদারদের সম্মতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে, ৯। দখলহীন মালিকদের জমি ক্রয় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে জমি দখলের জন্য দাঙ্গা ফ্যাসাদ এবং মামলা মকদ্দমায় জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ১০। স্ট্যাম্প ফিস ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে জমির বাজার মূল্য অপেক্ষা কম মূল্য নির্ধারণ করে দলিল রেজিষ্ট্রি করলে ষ্টাম্প আইনের ৬৪ ধারা মোতাবেক ক্রেতা/ বিক্রেতার শাস্তি হতে পারে, ১১। মালিকানা নিয়ে বিরোধ আছে এমন জমি ক্রয় করলে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে, ১২। বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে জমি বিক্রয়ের প্রস্তাব হলে তার মধ্যে সমস্যা নিহিত থাকার সম্ভাবনা বেশি। (সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস হতে জমির মূল্য এবং রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে), ১৩। শহর ও শহরতলীতে বিক্রির জন্য প্রস্তাবিত জমি সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে অধিগ্রহণ হয়েছে কিনা অথবা অধীগ্রহণের প্রস্তাবাধীন কিনা তা সংশ্লিষ্ট অফিস হতে যাচাই করে দেখা আবশ্যক, ১৪। বিক্রেতার মালিকানা স্বত্ব ও দখল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করে যাচাই করার জন্য আবশ্যক হলে ভূমি বিষয়ে অভিজ্ঞ, সৎ ও নিষ্ঠাবান আইনজীবির পরামর্শ নেয়া উচিত, ১৫। কোন জমি প্রথম বিক্রির পর নামজারি করার পূর্বে যদি একাধিকবার বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়ে থাকে তা হলে সংশ্লিষ্ট সকল ভূয়া দলিল পরীক্ষা করে মৌজার নাম, ক্রেতা/ বিক্রেতা খতিয়ান ও দাগ নম্বর পরীক্ষা করে সর্বশেষ বিক্রেতার মালিকানা স্বত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ( সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিস অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে দাগ সূচী, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ, জেএল নং, রেকর্ড, খাজনা, নামজারী, জরিপ সংক্রান্ত তথ্য এবং জমির প্রকৃতি জানা যাবে), ১৬। জমির খাজনা/ ভূমি কর অনাদায়ে নিলাম হয়েছে কিনা তা যাচাই করা আবশ্যক, ১৭। জমি সিকস্তি হওয়ার কারণে মালিকানা বিলুপ্ত হয়েছে কিনা তা যাচাই করা আবশ্যক, ১৮। সংশ্লিষ্ট জমি সরকার বা কোন সংস্থাকে ঋণ গ্রহণের মর্গেজ দেয়া আছে কিনা তা যাচাই করা আবশ্যক, ১৯। বিক্রি প্রস্তাবিত জমিতে কোন বিরোধ বা মামলা মকদ্দমা আছে কিনা তা পার্শ্ববর্তী মালিকদের নিকট হতে অনুসন্ধান করে যাচাই করা যেতে পারে, ২০।
এজমালি তথা যৌথ মালিকানা সম্পত্তি ক্রয় করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মতি অথবা Power of Attorney(আমমোক্তার নামা) দেয়া আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া আবশ্য, ২১। বিক্রয় প্রস্তাবিত জমি বিগত ৩০ বছরে কত বার হস্তান্তরিত হয়েছে তা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে তল্লাশকারক দিয়ে যাচাই করা আবশ্যক। ইহা ছাড়া ভূমি মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেও জমির মালিকানা সংক্রন্ত তথ্য জানা যেতে পারে।
জমি ক্রয়ের পর ক্রেতা মালিকের কর্তব্য, জমি ক্রয়ের পর নতুন ভূমি মালিকের কতকগুলি আবশ্যকীয় কর্তব্য আছে। এ কর্তব্য দ্রুত পালন না করলে মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
সুতরাং জমি ক্রয়ের পর একজন ভূমি মালিকের কর্তব্য হলো :
১। জমি রেজিষ্ট্রি করার পর খরিদা জমি দখল, সীমানা নির্ধারণ এবং জমি ব্যবহার তথা চাষাবাদ বা বাড়িঘর নির্মাণ করা, ২। রেজিষ্ট্রি অফিস হতে মূল দলিল গ্রহণ করা, ৩। মূল দলিল প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে দলিলের সার্টিফাইড কপি নেওয়ার ব্যবস্থা করা, ৪। মিউটেশন/ নামজারি করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অফিসে দলিলের সত্যায়িত কপিসহ নির্ধারিত ফিস দিয়ে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে মিউটেশন/ নামজারি করানোর ব্যবস্থা করা, ৫। মিউটেশন/ নামজারি মঞ্জুর হলে আদেশপত্রের সার্টিফাইড কপি এবং নতুন খতিয়ানের সার্টিফাইড পর্চা গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা, ৬। মিউটেশন মোতাবেক জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর নিয়মিত পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা, ৭। জমি ক্রয়ের পর উহা বিক্রেতার দখলে রাখা অত্যন্ত বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অসাধু মালিক কর্তৃক তার দখল দেখিয়ে অন্য ক্রেতার নিকট পুনরায় বিক্রি করার সুযোগ থাকে, ৮। মিউটেশন তথা নামজারি না করলে মালিক কর্তৃক পুনরায় জমি বিক্রি করার সুযোগ থাকে, ৯। মালিকানা প্রমাণের জন্য সাধারণত চারটি বিষয়ে উপর জোর দেওয়া যেতে পারে। যথা- ক) দলিল সঠিক আছে কিনা, খ) জমি দখলে আছে কিনা, গ) দাখিলা অর্থাৎ খাজনা দেয় কিনা (খাজনা দেওয়ার পূর্ব শর্ত হল মিউটেশন বা নামজারী) এবং ঘ) খতিয়ান ও পর্চার মধ্যে মিল আছে কিনা, ১০। নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে জমি নিলাম হয়ে যেতে পারে, ১১। ভালভাবে সীমানা চিহ্নিত করে না রাখলে অন্যেরা অনধিকার প্রবেশ করার সুযোগ পাবে, ১১। ভূমি মালিকের দায়িত্ব ভূমির খাজনা/ কর নিয়মিত পরিশোধ করা, জমি ব্যবহার তথা চাষাবাদ বা অন্য কার্যক্রমে ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
বাংলাদেশের প্রায় ০% লোক কোন না কোনভাবে ভূমির উপর নির্ভরশীল। এদেশে ভূমি একটি বেশ সংবেদনশীল ও স্থিতিশীল সেক্টর। বিভিন্ন কারণে ভূমি বিরোধ সৃষ্টি হয়, প্রধান কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য (ক) যৌথ পরিবারের মধ্যে ভাগবণ্টন সংক্রান্তে বিরোধ (খ) ক্রয়কৃত জমির প্রকৃত মালিকানা সংক্রান্তে জটিলতা (গ) ক্রয়কৃত জমির দলিল সঠিকভাবে রেজিষ্ট্রি না করা (ঘ) ভূমি অফিসের রেকর্ড সংগ্রহে জটিলতা/ক্রুটি (ঙ) পৈত্রিক সম্পত্তি বন্টনে স্বচ্ছতার অভাব (চ) যৌথ পরিবারে বিশেষভাবে মেয়ে সন্তানদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির যথাযথবণ্টন না করা ইত্যাদি।
জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ সমূহ দেওয়ানী আদালতে নিস্পত্তি যোগ্য। দেওয়ানী আদালতে বিচার কার্য্য সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় যার ফলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিবর্গ নিজেরা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জমির দখল নিতে সচেষ্ট হন। ফলশ্রুতিতে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ শান্তি ভঙ্গের আশংকা দেখা দেয়। দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় ৬০% ফৌজদারী মামলা ভূমি সংক্রান্ত ঘটনা বা ঘটনার জের হিসাবে হয়ে থাকে। সুতরাং জমির ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সকলের অধিক যত্ববান ও সর্তক হওয়া উচিত।