বিদেশে থেকে কি জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যায়?

181943Land Ministry
Spread the love

বিদেশে থেকে কি জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যায়?

✅বিদেশে থেকে কি জমি ক্রয় করা যায় কি?
ভালো পরিবেশে বসবাস করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী করার আশায় বাংলাদেশীরা প্রবাসে পাড়ি জমায়। কিন্তু এত ভালকিছু পাবার পরেও প্রবাসীদের মন পড়ে থাকে নিজের দেশের উপর। আর তাই কিছু টাকা আয় করতে পারলে চিন্তা করে দেশে একটুকরো জমি কেনার। কিন্তু বিদেশে থেকে জমি কেনার কোন উপায় এখন আর নেই। ২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতাকেও দলিল করার সময় উপস্থিত থাকতে হবে। তাই বিদেশে বসে কিংবা অপ্রাপ্ত-বয়ষ্ক ছেলে মেয়ের নামে জমি কেনা এখন আর সম্ভব হয় না।

✅বিদেশ থেকে জমি বিক্রয় করা যায় কি?
বিদেশ থেকে যে কেউ তার দেশে রেখে যাওয়া যেকোনো সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন। এই বিক্রয় করতে হলে তাকে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে পাওয়ার দিতে হবে। শুধু জমিজমা-সংক্রান্ত নয়, যেকোনো কাজ আপনার অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন।

✅কি কি কারনে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি দেশে থাকা কোন বিসস্ত ব্যক্তিকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে পারবে?
?দেশে যদি তার জমি বিক্রেয় করার প্র্যজন হয় তখন জায়গা জমি বিক্রয়ের জন্য।
?ব্যাংক থেকে লোন নেবার বিপরীতে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক প্রদানের জন্য।
?জায়গা জমি দেখাশুনা, তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদানের জন্য।
?বিদেশে অবস্থাঙ্কালে তার যদি কোন মামলা পরিচালনার প্র্যজন হয় টা ব্যক্তির পক্ষে কোন মামলা পরিচালনার জন্য। তবে এক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।

অনেকেরই প্রবাসে থাকা কালীন দেশের জমি বিক্রয়ের প্রয়োজন হয়। আবার দেখা যায় এজমালি সম্পত্তি কোন অংশীদার প্রবাসে থাকায় জমি বিক্রয়ে সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়। আইন অনুযায়ী আপনি প্রবাসে থেকেই দেশের সম্পত্তি বিক্রয়ের করতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা নিম্নরূপ-

১. একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর নিকট গিয়ে জমি বিক্রয়ের পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিল তৈরী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হবে।
?পাওয়ার দাতার নাম ঠিকানার বিস্তারিত বিবরন
?পাওয়ার গ্রহীতার নাম ঠিকানার বিস্তারিত বিবরন
?জমির পরিমাণ ও অবস্থানের বিস্তারিত বিবরন

২. পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিল তৈরী হলে ডাকযোগে দলিল ও পাওয়ার গ্রহীতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও NID এর কপি পাওয়ার দাতার প্রবাসী ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।

৩. ডাক প্রাপ্তির পর পাওয়ার দাতাকে তার নিজের পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি ছবি ও NID এর কপি সহ প্রেরিত দলিল, গ্রহীতার ছবি ও NID এর কপি নিয়ে অবস্থানরত দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যেতে হবে।

৪. দূতাবাসে গিয়ে পাওয়ার দাতা একজন কাউন্সিলরের সামনে দলিলে স্বাক্ষর করবেন। উক্ত কাউন্সিলর ও দলিলে স্বাক্ষর করবেন। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পাওয়ার দাতা দলিলটি ডাকযোগে দেশে প্রেরণ করবেন।

৫. পাওয়ার গ্রহীতা ডাক হতে দলিলটি গ্রহণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত দলিলটি পরীক্ষা করে সত্যায়িত করে দিবেন।

৬. এরপর পাওয়ার গ্রহীতাকে দলিলটি নিয়ে ডি.সি. অফিসের রাজস্ব কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে দলিলটিতে আঠা যুক্ত প্রয়োজনীয় স্টম্প লাগানো হবে। এবং একটি কপি সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হবে।

৭. এখন পাওয়ার গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমিটি পাওয়ার অব এ্যাটর্নী দলিলের শর্তানুযায়ী হস্তান্তর করতে পারবে।

পাওয়ার অব এ্যার্টনীর শর্ত অনুসারে পাওয়ার গ্রহীতা কতৃক সকল ধরনের হস্তান্তর এমন ভাবে কার্যকর হবে যেন হস্তান্তরটি পাওয়ার দাতা কর্তৃক সম্পন্ন হয়েছে।

✅আসুন প্রথমে জেনে নিই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলতে আসলে কি বোঝায়?
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২ এর ধারা২ অনুযায়ী পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র অর্থ এমন কোনো দলিল যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিলে বর্ণিত কার্য সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন। বাংলায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নিকে বলা হয় “মোক্তারনামা” এর শাব্দিক অর্থ “প্রতিনিধি”। তবে “মোক্তারনামা” শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “মোক্তার নিয়োগপত্র” বা প্রতিনিধি নিয়োগপত্র।

মোক্তারনামা দুই প্রকারের হয়।
(১) আম-মোক্তারনামা,
(২) খাস-মোক্তারনামা।

আম-মোক্তার নামার মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং খাস মোক্তারনামার মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবশ্যই লিখিত হতে হবে যেহেতু এটি একটি আইনগত দলিল। বিদেশে থাকাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইলে প্রথমেই তাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সর্ম্পকে জানতে হবে। এই ক্ষেত্রে এমন কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে এটি করাতে হবে যিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পর্কে ভাল জানেন বা এমন কাউকে দিয়ে সঠিকভাবে লিখে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যায়ন করে পাঠাতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে ইচ্ছুক প্রবাসী যে দেশে অবস্থান করবেন, সেই দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনসুলারের সম্মুখে দাতা স্বাক্ষর করবেন এবং উক্ত কনসুলার কর্তৃক তা সত্যায়িত হবার পর পাওয়ারদাতা পাওয়ারটি গ্রহীতা বা আম-মোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দিবেন। উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পাওয়ার পর তা বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্ট্রির (পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়) সহকারী সচিব, কনসুলার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে।

পরবর্তীতে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আম-মোক্তারনামা দলিলে প্রদত্ত বর্নিত সম্পত্তিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত আছে কিনা তার তথ্যসহ সকল দাগের তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরাবর। সকল তথ্যসমগ্র জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে আসার পর ২,০০০/- টাকার চালান প্রদানের পর নির্দিষ্ট একটি সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইহাতে ৫০০ টাকার এবং এর অপর পাতায় ৫০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্প লাগাবে। তখন অত্র পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল নম্বর এবং এই নম্বর দিয়েই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা যাচাই বাছাই করা থাকে।

✅ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?
অনেকেই এটা ভেবে থাকেন বা ভূল করেন যে, ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করতে হয় না কারণ এটি অনেকগুলো সরকারি অফিস হতে নানাভাবে যাচাই বাছাই হয়ে আসে। তবে এ ধারণাটা একেবারেই ভুল। ফরেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পাওয়ার অব অ্যাটর্নিটি স্ট্যাম্পযুক্ত হওয়ার পর এটি রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ধারা ৮৯ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রার ১নং বহিতে নথিভূক্ত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

✅পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি একবার দিয়ে দিলে তা আর বাতিল করা যায় না বা সরল মনে এটা বিশ্বাস করেন এটি বাতিল অযোগ্য বা এটার অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। পাওয়ারদাতা বা পাওয়ারগ্রহীতা চাইলেই এটার অবসান করতে পারবেন। পাওয়ারদাতা এটার অবসান ঘটাতে চাইলে উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে পাওয়ার গ্রহীতাকে রেজিস্ট্রার্ড ডাকের মাধ্যমে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রদত্ত ক্ষমতার অবসান ঘটাতে পারবেন। আবার পাওয়ার গ্রহীতাও পাওয়ার দাতাকে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদানপূর্বক পাওয়ার অব অ্যাটর্নির দায়িত্ব পরিত্যাগ করতে পারবেন।

✅পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কখন বাতিল করা যায়?
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলটি রেজিস্ট্রি করার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আইনত সেই সমস্ত কাজ করতে পারবেন যা আপনি করতে পারতেন। তবে মোক্তারনামা যে কোনো সময় বাতিল করা যায়। যে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সে জেলায় রেজিস্ট্রারের বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের জন্য আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রার এটি রদ করবেন নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং তার জেলার রেজিস্ট্রি অফিসে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। যদি রেজিস্ট্রি করা না হয়ে থাকে তাহলে আমমোক্তার বাতিল ঘোষণা করে নির্ধারিত স্ট্যাম্পে দলিল সম্পন্ন করা যেতে পারে। তবে স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মোক্তারনামা স্বার্থপূর্ণ বা পরিত্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা যায় না। এ ছাড়া মোক্তারনামা বাতিলের পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ-

ক) মোক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে আপনা-আপনিই বাতিল হয়ে যায়।
খ) মোক্তারনামা নির্দিষ্ট কোনো কার্যের জন্য করা হলে ওই কাজ সমাপ্তিতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
গ) যৌথ ক্ষমতার মোক্তারনামার পক্ষদের একজনের মৃত্যুতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেশে থেকে দেওয়া হোক আর বিদেশ থেকেই হোক না কেন অত্র পাওয়ার দেবার আগে তাকে অবশ্যই, অর্থাৎ যাকে পাওয়ার দেওয়া হবে তার সম্পর্কে জানতে হবে যে সে কতটা বিশ্বস্ত। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গা জমি হস্তান্তর বা বিক্রি করে দেন, তখন মূল মালিক বিপদে পড়েন। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও কম হয় না, তাই এ সকল ঝামেলায় পড়ার আগে সতর্ক থাকা উচিৎ। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

বায়া দলিল কি?


Spread the love

Join The Discussion

One thought on “বিদেশে থেকে কি জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যায়?”

  • Karim

    অনেক ভালো হইছে

    Reply

Compare listings

Compare