নারীরা সম্পত্তিতে সমানাধিকার কি আদৌ পাবেন?

নারী
Spread the love

নারীরা সম্পত্তিতে সমানাধিকার কি আদৌ পাবেন? সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়ার অধিকার নেই হিন্দু নারীদের৷ মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে শরিয়া আইনে তাঁদের ভাগ পুরুষের অর্ধেক, সেটাও ভাগ্যে জোটে না অধিকাংশের৷ এভাবে যুগ যুগ ধরে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশের নারীরা৷

এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তাঁর এই আহ্বান অনেকের মধ্যে আশা জাগালেও সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে৷

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমানাধিকার পাওয়া, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যাজনক৷ কারণ, কোনো কোনো আইনে সমানাধিকারের ব্যবস্থাটা নেই৷ সেটা করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে৷’’

‘‘আইন সংশোধন তো হতে পারে, সাংসদদের হাতে৷ দায়িত্ব, অধিকার অথবা সুযোগ উনাদের৷ সেই রকম কোনো উদ্যোগ আমরা সাংসদদের কাছ থেকে দেখছি না৷’’সাম্প্রতিক কোনো গবেষণা পাওয়া না গেলেও ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৭০ ভাগ নারীর সম্পদের ওপর মালিকানা নেই৷ ফলে তাঁরা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ওপর যেমন নির্ভরশীল থাকেন, তেমনি নিজেরা কিছু করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷

ওই গবেষণায় দেখা যায়, এক শতাংশের সম্পদ থাকলেও পরবর্তীতে তা হারিয়েছেন৷ ২৯ ভাগ নারী সম্পদের মালিক হয়েছেন উত্তরাধিকার সূত্রে৷ নারী উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের ৮২ শতাংশ জানান, তাঁদের সম্পদে নিজের অধিকার বা মালিকানা নেই৷ অধিকাংশ নারীই নিজের সম্পদ ব্যবহারে কোনো মতামতও দিতে পারেন না৷ মাত্র ২৬ শতাংশ নারী মতামত দেয়ার সুযোগ পান৷

সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিয়ে নানা সময় বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি

১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ন নীতিতে ভূমির অধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও, পরে তা স্পষ্টাক্ষরে সংযুক্ত হয়নি৷ এমনকি নতুন আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ২১ বছরেও৷

এর মধ্যে শরিয়া আইন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনগুলোর দিক থেকে বড় ধরনের বাধার আশঙ্কা রয়েছে৷

এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৮ এপ্রিল ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারপতি এবং বিচারকদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বিচারপতি বা অন্য সবাই রয়েছেন, তাঁদের আমি অনুরোধ করব, হ্যাঁ, আমাদের ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম আইন (শরিয়া আইন) মানতে হবে, এটা ঠিক৷

কিন্তু কেবল শরিয়া আইনের দোহাই দিয়ে মা-মেয়েকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পদ যে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, তার কোনো সুরাহা করা যায় কিনা- আপনারা দয়া করে একটু দেখবেন৷ এটা করা দরকার৷’’

শরিয়া আইন মানলে সম্পত্তিতে নারীদের সমান ভাগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না বলেই মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক৷

তিনি বলেন, ‘‘সংসদ চাইলে আইন পরিবর্তন করতে পারে৷ তবে মুসলমানদের জন্য করতে হলে আলেম সমাজের মতামত নিতে হবে৷’’

ইসলামের বিধান সম্পর্কে এহসানুল হক বলেন, ‘‘ইসলামের উত্তরাধিকার আইন নিয়ে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন৷ তো সেক্ষেত্রে আল্লাহপাকের নির্দেশনা হচ্ছে, ‘লিজ্জাকারে মিসলু হাজ্জিল উন সাইয়াইন’ বা দুই মেয়ে সমান একজন ছেলে পাবেন৷ এবং কোরানে এই বিধান সমন্বয় করার পরে আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, ‘তিলকা হুদুদুল্লাহ’ অর্থাৎ এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, এগুলো তোমরা অতিক্রম করবে না৷

এজন্য আলীমগণ ইসলামের যে উত্তরাধিকার আইন তা পরিবর্তনের পক্ষে মত প্রদান করেন না৷ অর্থাৎ, ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা যাবে না৷’’

নারীদের জন্য পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে মহিলারাই সম্পত্তি পায়, পুরুষরা পায় না৷ কিন্তু শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দুই মেয়ে সমান একজন ছেলে৷ তার পেছনে ইসলামের পারিবারিক কাঠামোর যুক্তি আছে৷ এক্ষেত্রে পরিবারের কর্তা হিসেবে পুরুষকে নির্ধারণ করেছে৷ একথা রাসুল (সা.) বিদায় হজ্জেও বলেছেন, ‘তোমাদের স্ত্রীদের দায়িত্ব তোমাদের উপর৷’ স্ত্রী-সন্তান-বৃদ্ধ পিতা-মাতা সবার দায়িত্ব পুরুষের ওপর৷ এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম পৈত্রিক সম্পত্তি (ছেলেকে) দ্বিগুণ দিয়েছে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি একটা ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্য বলতে চাই, সকল ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের বিষয়ে ছেলের দ্বিগুণ, মেয়ের একগুণ, এমন নয়৷ সন্তান মারা গেলে, সন্তানের সম্পদ হতে পিতা-মাতা সমান ছয় ভাগের এক ভাগ পায়৷ তেমনি কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, সন্তান বা পিতা-মাতা না থাকলে ভাই-বোন তাঁর সম্পদের ভাগ সমান অংশ পায়৷ এভাবে দেখা যায় ১০টি ক্ষেত্রে  নারীরা পুরুষের সমান অংশ পায়৷’’

প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানের পর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে মূল্যায়ন করে আমাদের মধ্যেকার দৃষ্টিভঙ্গিরও আজকে পরিবর্তন প্রয়োজন৷’’

নারী

‘আইনি অধিকারও নারীরা পান না’

শরিয়া আইনে নারীদের ভাগ পুরুষদের অর্ধেক হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে নারীরা সেই সম্পত্তিও পান না বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়টি বিভিন্ন আইনে বিভিন্নভাবে বলা আছে৷ যা বলা আছে, নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের যে প্রাপ্য, সেটাই পাচ্ছেন না৷

ভিন্ন কারণে৷ অধিকাংশ সময়ে সামাজিক কারণে৷ আমাদের সামাজিক অবস্থার কারণে অনেক নারীদকে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়৷ বাবার উপরে, ভাইদের উপরে, অনেক সময় সেই প্রেক্ষিত এবং পারিবারিক সমর্থন পাওয়ার জন্য অনেক সময় নারীরা উত্তরাধিকারের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলেন না, দাবি তোলেন না আসলে৷ সেটাই হলো বাস্তবতা৷’’

মালয়া ইউনিভার্সিটির ‘দ্য রাইটস অফ উইমেন ইন প্রোপার্টি শেয়ারিং ইন বাংলাদেশ: ক্যান দ্য ইনহেরিটেন্স সিস্টেম এলিমিনেইট ডিসক্রিমিনেশন?’ শীর্ষক গবেষণায় নারীরা কীভাবে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেটার চিত্র দেখানো হয়৷

এতে বলা হয়, বেশিরভাগ নারীই তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন৷ যাঁরা সম্পত্তি পান, তাঁরা স্বাধীনভাবে ভোগ করতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না৷ যাঁরা ভাইদের কাছ থেকে সম্পত্তির অধিকার চান, তাঁদেরকে অনেক সময় একঘরে করে ফেলা হয়৷ এক্ষেত্রে আইনি অধিকার চাওয়া এবং না পাওয়ার প্রবণতা আছে৷প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে নারী সংগঠনগুলোকে জোরালো দাবি তোলার আহ্বান জানিয়ে সারা হোসেন বলেন, ‘‘এখন আশা করা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের ভিত্তিতে সাংসদরা যাঁরা আছেন, বা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের উচিত সমান অধিকারের ব্যাপারটি দেখা৷ যেমন আমাদের নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় বলেন বা আইন মন্ত্রণালয় বলেন, তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন৷

শরিয়া আইন ঠিক রেখেও ‘আছে সমাধান’

শরিয়া আইনের ভেতরে থেকেও সম্পত্তিতে নারীদের সমান ভাগ নিশ্চিতের সুযোগ আছে বলে পথ বাতলে দিয়েছেন আইনজীবী সারা হোসেন৷ ওই আইনে হেবা বা দানের যে বিধান আছে, সেটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মন্তব্য তাঁর৷

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘‘সেটা সম্ভব এইভাবে যে, আজকাল অনেকে করছেন এমন, আরো অনেককে উদ্বুদ্ধ করা যায়, যাঁরা তাঁদের সম্পত্তি সমানভাবে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দেন৷ সেক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে মা-বাবা বা পিতা-মাতা যদি তাঁদের সম্পত্তি হেবা করে দেন, তাঁদের সন্তানদের কাছে, সেখানে তাঁরা সমান ভাগ দিয়ে হেবাটা করতে পারেন৷ সেভাবে এক অর্থে অসম যে ব্যবস্থা আছে, সেটা সমাধান করা সম্ভব৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ইদানীং আমরা দেখছি, অনেকে, বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের মধ্যে এক নারী সন্তান বা দুই নারী সন্তান, অথবা যাঁদের ছেলে-সন্তান মেয়ে-সন্তান দু’টোই আছে, তাঁরা চলে যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যাতে কোনো কোন্দল বা ভুল বোঝাবুঝি না হয়  তাই তারা আগে থেকে ঠিক করে যাচ্ছেন যে, কীভাবে তাদের সম্পত্তি ভাগ করা হবে৷ এভাবে সমাধান করা যায়৷ আমি যতদূর জানি, শরিয়া কোনো সমস্যাই হয় না, যেহেতু শরিয়া অনুযায়ী হেবা করা যায়৷’’

আরও নিউজ পেতে ক্লিক করুন 

Do women get equal rights in property at all? Hindu women have no right to share in property In the case of Muslim women, their share in Sharia law is half that of men, which is also not the fate of the majority Thus, the women of Bangladesh have been deprived of land rights for ages

In this context, Prime Minister Sheikh Hasina has recently called for ensuring equal rights of women in inherited property. While his call has raised hopes, many are skeptical about how it will be implemented.

Barrister Sara Hossain, executive director of the Bangladesh Legal Aid and Services Trust (BLAST), told Deutsche Welle: Because, there is no provision of equality in some laws To do that, the law needs to be amended. “

Capture 1

“The law can be amended in the hands of the MPs Responsibilities, rights or opportunities are theirs We do not see any such initiative from the parliamentarians. ” Although no recent study has been found, a 2014 study shows that 80% of women in Bangladesh do not own property. As a result, they are dependent on the male members of the family, even if they want to do something, but it is not possible

According to the study, one percent of the wealth, but later lost 7 29% of women have inherited property through inheritance 72% of women entrepreneurs and workers said that they do not have any rights or ownership in their property Most women can’t even comment on the use of their resources Only 26 percent of women get the opportunity to give an opinion

Although various organizations have raised demands for equal rights of women in property, no effective action has been taken

Although women’s rights policy in 1997 called for equal rights for men and women in land rights, it was not explicitly linked. Even the new law has not been initiated in 21 years

There are fears of major obstacles from various Islamic organizations, including Hefazat-e-Islam, to change Sharia law.

নারী

In this context, addressing the judges and judges present at the National Legal Aid Day on April 26, Prime Minister Sheikh Hasina said, “In this case, we have a judge or everyone else in front of us. Law) must be obeyed, it is exactly 6

But please see if there is any solution to the issue of deprivation of mother and daughter and deprivation of father’s property only on the pretext of Sharia law. It needs to be done. “

If Sharia law is obeyed, women will not have the opportunity to share equally in the property, said Dr. Associate Professor of the Department of Arabic, University of Dhaka. Zubair Muhammad Ehsanul Haque 6

“Parliament can change the law if it wants to,” he said But for Muslims to do that, they have to take the opinion of the scholarly community. “

Regarding the provisions of Islam, Ehsanul Haq said, “Allah has clearly stated in the Holy Qur’an about the law of inheritance of Islam. In that case, the instruction of Allah is, ‘Lijjakare mislu hajjil un sayain’ or two daughters will get one son. And after adjusting this provision in the Qur’an, it is said at the end of the verse, “Tilka Hududullah” means these are the limits of Allah, these you will not transgress.


Spread the love

Join The Discussion

Compare listings

Compare