বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় দুই ধরনের মামলা রয়েছে। একটি হলো দেওয়ানি অপরটি ফৌজদারি মামলা। নিজের অধিকার আদায়ে সম্পত্তির ওপর স্বত্ব ও দখলের জন্য যে মামলার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয় তাকে সাধারণত দেওয়ানি মামলা বলা হয়। এ ছাড়া মানহানির কারণে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করলেও তা দেওয়ানি মামলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
দেওয়ানি মামলার ধরন
দেওয়ানি মামলার অনেক ধরন রয়েছে। আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা, সব ধরনের স্বত্ব, মানবিক সম্পর্ক (পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক) নিয়ে বিরোধ, মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় প্রার্থনা করার অধিকার, ভোটাধিকার ইত্যাদি।
আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা
কোনো ব্যক্তি অন্য কারো দ্বারা শারীরিকভাবে বা অন্য কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। এ ছাড়া মানহানিকর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও মামলা দায়ের করা যায়।
সম্পত্তির অধিকারের মামলা
নিজের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হলে তিনি সম্পত্তির অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের এখতিয়ার অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে হবে।
সব ধরনের স্বত্ব
কোনো ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য বা ট্রেড লাইসেন্স এবং বইয়ের স্বত্ব কাউকে দেওয়ার পর যদি ওই ব্যক্তি এসব স্বত্বাধিকার থেকে বঞ্চিত হোন তাহলে তিনি এ অধিকার ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
ভরণপোষণের অধিকার
মা-বাবা বৃদ্ধ হলে ছেলে যদি তাঁদের জন্য কোনো ভরণপোষণ না দেয় তাহলে আদালতে ভরণপোষণ চেয়ে মামলা দায়ের করা যায়। এ ছাড়া স্ত্রীর ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী ভরণপোষণ চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন।
প্রার্থনার অধিকার
কোনো ব্যক্তি মসজিদে নামাজ পড়তে না পারলে এবং মন্দিরে পূজা করতে না পারলে এবং গীর্জায় প্রার্থনা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে সে অধিকার চেয়ে তিনি মামলা দায়ের করতে পারেন।
ভোটাধিকার
দেশের নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়ার অধিকার সবারই রয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তিনি সে অধিকার ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। যা দেওয়ানি আদালতের মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
যেসব আদালতে দেওয়ানি মামলায় করা যায়
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে ও দেওয়ানি মামলা পরিচালিত হয়। তবে নিম্ন আদালতে মামলার রায়ের পর কেবল উচ্চ আদালতে আপিল অথবা রিভিশনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা পরিচালিত হয়।
জেলা জজ আদালতের এখতিয়ার
জেলা জজ আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় মামলা পরিচালিত হয়। এ আদালতে দেওয়ানি মামলা পরিচালিত হলে তাকে দেওয়ানি আদালত এবং ফৌজদারি মামলা পরিচালিত হলে তাকে ফৌজদারি আদালত বলে। সাধারণত এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের মামলার আপিল জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হয়। জেলা জজ আদালত তাঁর নিম্ন আদালতের মোকদ্দমা স্থানান্তর সম্পর্কিত দরখাস্ত, রিভিশন শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করতে পারেন। পারিবারিক আদালতের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আপিল গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করে থাকেন।
অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত
অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারিক ক্ষমতা জেলা জজের সমান। তবে কোনো মোকদ্দমা বা আপিল এ আদালতে সরাসরি দায়ের করা যায় না। জেলা জজ আদালতে দাখিল করলে জেলা জজ আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য এ আদালতে প্রেরণ করেন। অতিরিক্ত জেলা জজের কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই।
যুগ্ম জেলা জজ আদালত
প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক যুগ্ম জেলা জজ থাকেন। তিনি দেওয়ানি মোকদ্দমার সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারক। এ আদালত চার লাখ এক টাকা থেকে অসীম মূল্যমানের বিষয় বস্তুর মূল মোকদ্দমা গ্রহণ ও বিচার নিষ্পত্তি করতে পারেন।
সিনিয়র সহকারী জজ আদালত
দেশের প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক সিনিয়র সহকারী জজ আদালত রয়েছে। সম্পত্তি, অফিস, ব্যক্তিগত অপকার, ক্ষতিপূরণ ও ধর্মীয় অধিকারসংক্রান্ত যাবতীয় মোকদ্দমা সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা হয়। এ আদালত দুই লাখ এক টাকা থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের মূল মোকদ্দমা গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করতে পারেন।
সহকারী জজ আদালত
এ আদালতে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা মূল্যমানের বিষয় বস্তুর ওপর মামলা দায়ের করা যায়। এ আদালতের নিজস্ব কোনো আপিল এখতিয়ার নেই। সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব ঘোষণা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, চুক্তি কার্যকর, দলিল, চুক্তিপত্র, লিখিত অঙ্গীকারপত্র ইত্যাদি রদ ও রহিত, যেকোনো কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ রদ ও রহিত, দখল পাওয়া, সম্পত্তি বা অফিস সংক্রান্ত কোনো অধিকার সম্পর্কে ঘোষণা পাওয়া, টাকা আদায়, সম্পত্তি অগ্রক্রয়, নির্বাচন সংক্রান্ত মোকদ্দমা দায়ের করা যায়।