২০০৫ সালের ১ জুলাই থেকে জমির যেকোনো হস্তান্তরযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যে দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক অথচ রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি, তখন সেই দলিল নিয়ে আপনি কোনো দাবি করতে পারবেন না। সাব-কবলা দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধকি দলিল, বায়না দলিল, বণ্টননামা দলিলসহ বিভিন্ন হস্তান্তর দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। দলিলের বিষয়বস্তু যে এলাকার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে, সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে।
অনলাইনে জমির খতিয়ান দেখার নিয়ম
জমি বিক্রির দলিল রেজিস্ট্রি
জমি বিক্রির জন্য জমির বায়নানামা (বিক্রির চুক্তিপত্র) সম্পন্ন করা হলে তা রেজিস্ট্রি করতে হবে। জমির বায়নানামা সম্পাদনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে বায়নাটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। আর শর্ত অনুযায়ী বায়নার চুক্তি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করার সব পদ্ধতি মেনে সাব-কবলা দলিলটি সম্পাদিত হলে সম্পাদনের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে সাব-কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করাতে হবে। আইন অনুযায়ী, তিন মাস পার হয়ে গেলে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করার সুযোগ আছে।
দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় সতর্কতা
কোনো দলিল আইনগত ও যথাযথ পদ্ধতিতে সম্পাদনের পর রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমেই জমির সব দলিল-দস্তাবেজ ও মালিকানা যাচাই করতে হবে। দলিলটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে খসড়াটি ভালো করে যাচাই করতে হবে। দলিলে কোনো ভুল থাকলে ও রেজিস্ট্রি হলে এটি সংশোধনের ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই করের মাত্রা কমানোর জন্য জমির দাম কম দেখানো হয়। এতে ভবিষ্যতে কিছু প্রতিকার পেতে ঝামেলা হয়। দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরপরই নকল তুলতে হবে এবং এটি তুলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে ভুলভ্রান্তি আছে কি না। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় একটি রসিদ দেওয়া হয়। এই রসিদ মূল দলিল ওঠানোর সময় দেখাতে হয়। কোনো সম্পত্তির আংশিক এক জায়গায় এবং বাকি অংশ অন্য জায়গায় পড়লে বেশির ভাগ অংশ যে এলাকায় পড়বে, সেখানের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করতে হবে। কোনো বিশেষ কারণে দলিলদাতা বা গ্রহীতা অসুস্থ হলে সাব-রেজিস্ট্রারকে বাসায় নিয়েও রেজিস্ট্রি করা যায়। মনে রাখতে হবে, দলিল কার্যকর হয় দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকেই, অর্থাৎ যে তারিখে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়েছে, সেই তারিখ থেকে, দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ থেকে নয়। বাংলাদেশের বাইরে দলিল সম্পাদন করা হলে দলিলটি যেদিন বাংলাদেশে পৌঁছাবে, সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।
দলিল রেজিস্ট্রি ফি
বায়নাপত্র: সম্পত্তির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি ৫০০ টাকা। পাঁচ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে ফি এক হাজার টাকা। মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা।
বন্ধক দলিল: বন্ধকি অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি না হলে ফি বন্ধকি অর্থের ১ শতাংশ এবং ২০০ টাকার নিচে ও ৫০০ টাকার বেশি নয়। অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কিন্তু ২০ লাখ টাকার নিচে হলে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে তা এক হাজার ৫০০ টাকার কম নয় এবং দুই হাজার টাকার বেশিনয়।
বন্ধকি অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকার ওপরে হলে রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে বন্ধকি অর্থের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ। তবে তা তিন হাজার টাকার কম নয় এবং পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না।
হেবা ও দানপত্র: মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রে হেবানামা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে দানপত্র যদি স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি ও সহোদর ভাইবোনের মধ্যে হয়, তাহলে রেজিস্ট্রি ফি ১০০ টাকা।
বণ্টননামা দলিল: সম্পত্তির মূল্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ৫০০ টাকা, তিন লাখ টাকার বেশি এবং ১০ লাখ টাকার কম হলে ৭০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৩০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ২০০ টাকা। সম্পত্তির মূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম হলে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং সম্পত্তির মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি হলে দুই হাজার টাকা ফি দিতে হবে।